অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি

ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি? ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ আছে কি?



প্রশ্ন: ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি? ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ আছে কি?

উত্তর:
ঈশ্বর কি আছেন? এই ধরণের বিতর্কে এত বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, এইটা দেখে আমার ভালো লাগে। সর্বশেষ সমীক্ষা বলে যে আজকের বিশ্বে প্রায় 90% ব্যক্তিই ঈশ্বরের উপর অথবা কোন ঐশ্বরিক শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। যাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন তাঁদের উপরেই এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে ঈশ্বর সত্যিই বর্তমান আছেন। আমার মনে হয় যে এটা অন্যভাবে হওয়া উচিত ছিল।

তাই, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারা বা উপস্থিতিকে অস্বীকার করাও যায় না। এমনকি বাইবেলেও বলা আছে যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে আমাদের বিশ্বাসের দ্বারাই স্বীকার করতে হবে, “এবং শুধুমাত্র বিশ্বাসের দ্বারাই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব, কারণ যে তাঁর সংর্স্পশে আসবে তাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে তিনি আছেন, এবং যে তাঁকে আন্তরিকভাবে চাইবেন তাকেই তিনি পুরস্কৃত করবেন” (হেব্রুস 11:6 )। যদি ঈশ্বর চান, তাহলে তিনি আর্বিভূত হবেন এবং সমগ্র বিশ্বকে প্রমাণ করে দেবেন যে তিনি আছেন। কিন্তু এটা করলে, বিশ্বাসের কোন প্রয়োজনীয়তা আর থাকবে না। “পরে ভগবান যীশু তাকে বলেন, যেহেতু তুমি আমাকে দেখেছো, তাই তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছো; তারাই আশীর্বাদধন্য হবেন যারা আমাকে দেখেনি কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশ্বাস করে” (জন 20:29)।

এর অর্থ কখনই এইরকম নয় যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই।বাইবেলে উল্লেখ করা আছে, “স্বর্গ ঈশ্বরের মহিমাকে ব্যক্ত করে; আকাশ তাঁর হাতের কাজকে প্রচার করে। দিনের পর দিন তারা সম্মুখ উক্তি বা বক্তব্য প্রচার করে; রাতের পর রাত তারা জ্ঞান প্রদর্শন করে। এমন কোন বিবৃতি বা ভাষা নেই যেখানে তাদের কথা শোনা যায় না। তাদের কথা সমগ্র বিশ্বে ঘুরে বেড়ায়, তাদের বক্তব্য বিশ্বের শেষ প্রান্ত অবধি পৌঁছায়"(পস্লাম19:1-4)। নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের গভীরতাকে বোধগম্য করা, প্রকৃতির বিস্ময়কে পর্যবেক্ষন করা, সূর্যাস্তের সৌন্দর্যকে অবলোকন করা - এ সবের মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে উপলদ্ধি করা সম্ভব। এগুলি যদি যথেষ্ট না হয়ে থাকে, তাহলেও আমাদের নিজেদের হৃদয়ের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ আছে। এক্লেসিয়েস্টস 3:11 আমাদের বলে, “...তিনি মানুষদের হৃদয়ের মধ্যেই নিজের অস্তিত্বকে স্থাপন করে দিয়েছেন...” আমাদের অন্তরের কোন এক গভীরতা আমাদেরকে এই ব্যাপারে উপলব্ধি করায় যে এই জীবনের বাইরেও কিছু একটা আছে এবং এই বিশ্বের বাইরে কোন একজন বিরাজ করছেন। আমরা এই জ্ঞানকে বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা অস্বীকার করতে পারি, কিন্তু আমাদের মধ্যে এবং আমাদের মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এখনও বর্তমান। এইসব সত্ত্বেও, বাইবেল আমাদের সর্তক করে দেয় যে, এখনও পর্যন্ত কিছু লোক ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, “বোকা লোকেরা বলে যে তাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই”। (পস্লাম14:1)। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং সকল মহাদেশগুলির 98% এর চেয়েও বেশি লোক কোন না কোন ধরণের ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন – কোন কিছু (অথবা কোনো একজন) অবশ্যই এই বিশ্বাসের কারণ হবেন।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে বাইবেল-এর যুক্তিতর্ক ছাড়াও, তার্কিক যুক্তিতর্ক আছে। প্রথমেই হল তাত্ত্বিক যুক্তিতর্ক। তাত্ত্বিক যুক্তিতর্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় আকার মূলত ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করার জন্য ঈশ্বরের ধারণাকে ব্যবহার করে। এটা ঈশ্বরের সংজ্ঞা দিয়ে শুরু হয় যেমন, “ যার বাইরে মহত্তর কিছু চিন্তা করা যায় না”। এর পরের যুক্তি হল যার কোন অস্তিত্ব নেই তার থেকে যার অস্তিত্ব আছে তা বৃহত্তর হলে, কোন বৃহত্তম কল্পনার জিনিসের অবশ্যই অস্তিত্ব আছে”। যদি ঈশ্বর নাই থাকতেন তাহলে ঈশ্বর কখনই বৃহত্তম কল্পনার জিনিস হতো না – কিন্তু এতে ঈশ্বরের মূল সংজ্ঞার বিরোধ হতো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে উদ্দেশ্যবাদ যুক্তিতর্ক। উদ্দেশ্যবাদ যুক্তিতর্ক হল এই যে, যেহেতু বিশ্বব্রহ্মান্ড এমন এক বিস্ময়কর নকশা প্রদর্শন করছে, সেহেতু কোন একজন স্বর্গীয় নকশা পরিকল্পনাকারী তো থাকবেনই। উদাহরণস্বরূপ, যদি পৃথিবী সূর্যের থেকে আরও কয়েকশো মাইল কাছে থাকত অথবা সূর্যের আরও দূরে অবস্থান করত, তাহলে এখানে যেমন প্রাণের সহায়ক হচ্ছে তখন তা নাও হতে পারত। যদি আমাদের আবহাওয়ার উপাদানগুলির শতাংশের সামান্যতমও পার্থক্য হতো, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত জীবই মারা যেত। কোন প্রোটিন অণুর এককের গঠন হঠাৎ এবং অস্বাভাবিকভাবে হলে তার সম্ভাবনা হত 10243 এর মধ্যে 1 (অর্থাৎ 10 এর পরে 243 টি 0 এর মধ্যে 10)। একটি একক কোষ লক্ষ লক্ষ প্রোটিন অণুর সমন্বয়ে গঠিত।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে তৃতীয় যুক্তিকে বলা হয় সৃষ্টিতত্ব সংক্রান্ত যুক্তিতর্ক। প্রত্যেক কার্যের অবশ্যই একটি করে কারণ থাকে। এই বিশ্বের প্রত্যেকটি জিনিসই হল এক একটি কারণ। প্রত্যেকটি জিনিসের অস্তিত্বের একটি করে কারণ নিশ্চয়ই আছে। শেষপর্যন্ত, কোন একটা “অ-কারণ” ব্যাপার থাকবেই যা প্রত্যেকটি জিনিসেরই অস্তিত্ব কারণ হয় । সেই “অ-কারণ” ব্যাপারটাই হল ঈশ্বর। চতুর্থ যুক্তিটি নৈতিক যুক্তি হিসাবে পরিচিত। ইতিহাস জুড়ে প্রত্যেকটি সংস্কৃতির কোন না কোন নিয়মকানুন ছিল। প্রত্যেকেরই ঠিক এবং বেঠিক জ্ঞান আছে। হত্যা করা, মিথ্যে কথা বলা, চুরি করা, এবং অনৈতিকতা সারা বিশ্বজুড়ে পরিত্যক্ত হয়েছে। যদি পবিত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে না এসে থাকে, তবে কোথা থেকে এইসব ঠিক ও বেঠিকের জ্ঞানগুলি এসেছিল?

এগুলি ছাড়াও, বাইবেল আমাদেরকে বলে যে লোকেরা ঈশ্বরের স্বচ্ছ ও অস্বীকার্য জ্ঞানকে বাতিল করবে, এবং পরিবর্তে মিথ্যাকে বিশ্বাস করবে। রোমানস্ 1:25 বলে, “তারা একটা মিথ্যার জন্য ঈশ্বরের সত্যকে বদল করে, এবং তারা নির্মাণকারীর – যিনি চিরকালীনই উপাস্য, তার পরিবর্তে নির্মিত দ্রব্যগুলিকেই পূজা করে। আমেন”। বাইবেল আরো প্রচার করে যে লোকেরা কোন কারণ ছাড়াই ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করে, “যেহেতু ঈশ্বরের দ্বারা পৃথিবীর নির্মাণ এক অদৃশ্য শৈলী – তাঁর অসীম শক্তি এবং স্বর্গীয় প্রকৃতি – পরিষ্কার ভাবে দেখা গেছে, কি থেকে তৈরি হয়েছে তা বোঝা গেছে, যাতে মানুষের কোন অকারণ বক্তব্য না থাকে” (রোমানস্ 1:20)।

লোকেরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করার জন্য যুক্তি দেয় যে এটা “অ-বৈজ্ঞানিক” অথবা “এর কোন প্রমাণ নেই”। কিন্তু প্রধান কারণ হল, লোকে যদি একবার অনুমোদন করে যে ঈশ্বর আছেন, তাহলে তারা ঈশ্বরের প্রতি দায়িত্বশীল হবে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের ক্ষমা পাবার প্রয়োজনও হবে (রোমানস্3:23; 6:23)। যদি ঈশ্বর থাকেন, তাহলে আমরা আমাদের কাজের জন্য তাঁর কাছে জবাবদিহি করব। যদি ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে আমরা আমাদের ইচ্ছা অনুসারে যা খুশি তা করতে পারব এবং ঈশ্বরের বিচাবের জন্য উদ্বিগ্ন হতে হবে না। সেই কারণেই আমাদের মধ্যে অনেকেই যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন না, তারা প্রাকিতিক অভ্যুত্থান তত্ত্বের কথা বলেন – সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের কোন বিকল্প লোকেদেরকে দিতে। ঈশ্বর আছেন এবং শেষপর্যন্ত প্রত্যেকেই জানেন যে তিনি আছেনই। বাস্তিবিক ভাবে, কেউ কেউ এত ভীষণভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করার জন্য চেষ্টা করে যে সেটাই তাঁর অস্তিত্বের পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে কিভাবে আমরা জানব? একজন খ্রিষ্টান হিসাবে আমরা জানি ঈশ্বর আছেন কারণ আমরা প্রত্যেক দিনই তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি যে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন তা আমরা নিজেদের কানে শুনতে না পেলেও আমরা তাঁর উপস্থিতি বুঝতে পারি, তাঁর আদেশ আমরা অনুভব করি, তাঁর প্রেম আমরা জানি, তাঁর আশীর্বাদ সবাই কামনা করি। যেসব ব্যাপার আমাদের জীবনে ঘটেছে, ঈশ্বরের উপস্থিতি ছাড়া তার আর কোন বাখ্যাই হওয়া সম্ভব হয় না। যে অলৌকিক ভাবে ঈশ্বর আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন এবং আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছেন, তা আমরা স্বীকার না করে থাকতে পারি না এবং এই কারণে তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। এর কোন যুক্তিই তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারবে না যারা এই স্বচ্ছ ব্যাপারটাকে স্বীকার করতে চায় না। পরিশেষে, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাসের দ্বারাই গ্রহণ করতে হবে(হিব্রুস11:6)। ঈশ্বরে বিশ্বাস অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া নয়, বরং এটা একটা আলোকিত ঘরে নিরাপদে পদক্ষেপ রাখা যেখানে 90% লোক ইতিমধ্যেই আছেন।

যিশুখ্রিষ্ট কে?



প্রশ্ন: যিশুখ্রিষ্ট কে?

উত্তর:
যিশুখ্রিষ্ট কে? “ঈশ্বরের কি অস্তিত্ব আছে?” এই প্রশ্নের মতন নয়, সামান্য কিছু লোকের প্রশ্ন আছে যে যিশুখ্রীষ্টের অস্তিত্ব ছিল কিনা। সাধারণভাবে এটাই গৃহীত হয়েছে যে যিশু সত্যিকারের একজন মানুষ ছিলেন যিনি এই পৃথিবীতে ইজরাইল নামক দেশে, প্রায় 2000 বছর আগে এসেছিলেন। এই বিতর্কটি তখনই আরম্ভ হয় যখন যিশুর সম্পূর্ণ পরিচয়ের বিষয়টা আলোচিত হয়। প্রায় সমস্ত প্রধান ধর্মই শিক্ষা দেয় যে যিশু ছিলেন একজন পয়গম্বর, একজন ভাল শিক্ষক, অথবা একজন ধার্মিক ব্যক্তি। সমস্যাটা হল, বাইবেল আমাদেরকে বলে যে যিশু একজন পয়গম্বর, একজন ভাল শিক্ষক অথবা একজন ধার্মিক ব্যক্তির চেয়েও আরও অসীম।

সি. এস. লিউইস তাঁর বইয়ে খ্রিষ্টীয় ধর্ম সর্ম্পকে লিখেছিলেন, “ লোকেরা তাঁর (যিশুখ্রিষ্ট) সর্ম্পকে প্রায়ই সত্যিকারের যে সমস্ত নির্বোধের মত বিষয়গুলি বলে তা থেকে বিরত রাখার জন্য আমি এখানে চেষ্টা করে যাচ্ছি: “আমি যিশুকে একজন বড় নৈতিক শিক্ষক রূপে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু তাঁকে ঈশ্বর রূপে মেনে নিতে পারছি না”। এই কথাটিই আমাদের বলা উচিত নয়। একজন মানুষ, যিনি সামান্য ছিলেন এবং বলা হয় যিশু যেসব বিষয়ের কথা বলেছিলেন তাতে তিনি একজন বড় নৈতিক শিক্ষক হতে পারেন না। হয় তিনি একজন পাগল ছিলেন – অথবা এমন এক স্তরের মানুষ যিনি বলেন তিনি একটা পোচ করা ডিম – অথবা এছাড়া তিনি একজন নরকের শয়তান হতে পারেন। আপনাকেই এই বিচার করতে হবে। হয় এই মানুষ ছিলেন, এবং আছেন, ঈশ্বরের সন্তান, অথবা তা না হলে একজন পাগল অথবা আরো খারাপ কিছু.. ....। আপনি তাকে বোকা হওয়ার জন্য চুপ করিয়ে দিতে পারেন, আপনি তার দিকে থুথু ছিটাতে পারেন, তাকে দৈত্য হিসাবে মেরে ফেলতে পারেন; অথবা আপরি তাঁর পায়ে পড়তে পারেন এবং তাঁকে প্রভু এবং ঈশ্বর বলে ডাকতে পারেন। কিন্তু আমরা তাঁকে যেন একজন বড় মানবিক শিক্ষক হওয়ার ব্যাপারে আজেবাজে বিষয়ের পৃষ্টপোষকতা না করি। তিনি আমাদের কাছে কোন বিকল্প খোলা রাখেন নি। তিনি তা করতে চানও নি।"

সুতরাং যিশু কে ছিলেন? তিনি কে ছিলেন সে ব্যাপারে বাইবেল কি বলে? প্রথমেই দেখা যাক জন 10:30 তে যিশুর কথাগুলি, “আমি এবং পিতা একই ব্যক্তি”। “এক নজরে এটা মনে নাও হতে পারে যে তিনিই ঈশ্বর। তবুও তাঁর বিবৃতিতে ইহুদীদের প্রতিক্রিয়াটি দেখা যাক, “আমরা এই সব কারণে তোমাকে পাথর ছুঁড়ে মারছিনা, ইহুদীরা উত্তর দিয়েছিল, মারছি ঈশ্বরের নিন্দা করার জন্য, কারণ তুমি একজন সামান্য মানুষ হয়ে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করছ” (জন10:33)। ইহুদীরা বুঝেছিল যিশুর বিবৃতিটা হচ্ছে ঈশ্বর বলে দাবী করার। পরের অনুচ্ছেদগুলিতে যিশু কখনও ইহুদীদেরকে সংশোধন করেন নি এই বলে “আমি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করিনি”। এটাই নির্দেশ করে যে যিশু সত্যিই নিজেকে, “আমি এবং পিতা একই ব্যক্তি” (জন10:30) এই বলে ঈশ্বর রূপে প্রচার করেছিলেন । জন 8:58 হল অন্য একটি উদাহরণ। যিশু প্রচার করেছিলেন, “আমি তোমাকে সত্য বলছি, যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, আব্রাহাম জন্মাবার আগে থেকে আমিই আছি!” এর উত্তরে, আবার, ইহুদীরা পাথর তুলে যিশুকে মারতে উদ্যত হয়েছিল (জন 8:59) যিশু তাঁর পরিচয় ঘোষণা করেছিলেন “আমি হলাম” বলে যেটা ঈশ্বরের জন্য পুরানো টেস্টামেন্টের একটা সরাসরি আবেদন (এক্সোডাস3:14)। তাহলে কেন ইহুদীরা যিশুকে পাথর মারতে উদ্যত হয়েছিল যদি না এমন কিছু একটা বলা হয়ে থাকে যার জন্য তারা মনে করে ঈশ্বরের নিন্দা করা হয়েছিল, এই বলে, ঈশ্বর বলে দাবী করা?

জন 1:1 বলে যে “বাণীগুলি ছিল ঈশ্বরের”। জন 1:14 বলে যে “বানীগুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছিল” এটা পরিষ্কার করে নির্দেশ করে যে যিশু রক্তমাংসে গড়া ঈশ্বর। যিশুর শিষ্য থমাস, যিশুর সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন, “হে প্রভু এবং হে ঈশ্বর” বলে (জন 20:28)। যিশু তাঁকে সংশোধন করেন নি। এপোস্টেল পল তাঁকে, “...আমাদের মহান ঈশ্বর এবং পরিত্রাতা, যিশুখ্রিষ্ট” এই রূপে বর্ণনা করেছেন (তিতাস2:13)। এপোস্টেল পিটার একই কথা বলেন, “...আমাদের ঈশ্বর এবং পরিত্রাতা হলেন যিশুখ্রিষ্ট” ( 2 পিটার 1:1)। পিতা ঈশ্বর যিশুর সম্পূর্ণ পরিচয়ের সাক্ষী, “কিস্তু পুত্রের সম্বন্ধে তিনি বলেন, “হে ঈশ্বর, আপনার সিংহাসন, অনন্তকাল ধরে থেকে যাবে, এবং ন্যায্যতা হবে আপনার রাজ্যের ধর্মগ্রন্থ”। খ্রিষ্টের পুরানো টেস্টামেন্টের ভবিষ্যদ্বানী তাঁর পবিত্রতার ব্যাপারে প্রচার করে, “আমাদের কাছে একটা শিশু জন্মেছে, আমাদেরকে একটা শিশু দেওয়া হয়েছে, এবং সরকার তাঁর কাঁধের ওপর চড়ে আছে। এবং তাঁকে বলা হবে একজন বিস্ময়কর কাউন্সেলর, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, শাশ্বত পিতা, শান্তির রাজপুত্র”।

অতএব, যেমন সি এস লুইস যুক্তি দিয়েছিলেন, যিশুকে একজন উত্তম শিক্ষক রূপে বিশ্বাস করা কোন বিকল্প নয়। যিশু পরিষ্কার ভাষায় এবং অনস্বীকার্য ভাবে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেন। যদি তিনি ঈশ্বর না হন, তাহলে তিনি একজন মিথ্যাবাদী, এবং তাহলে তিনি ভবিষ্যদ্বক্তা নন, ভাল শিক্ষক, অথবা ধার্মিক ব্যক্তি। যিশুর বানীগুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, আধুনিক “বিদ্বানেরা” দাবী করেন যে “সত্যিকারের ঐতিহাসিক যিশু" এমন অনেক কথাই বলেন নি যা বাইবেল তাঁর বানী হিসাবে উল্লেখ আছে। যিশু ঈশ্বরের বানী বলেছিলেন কি বলেননি তার ব্যাপারে অনর্থক তর্ক করার আমরা কে? কিভাবে দু হাজার বছর কেটে যাওয়ার পর একজন “বিদ্বান" তখনকার দিনে যাঁরা তাঁর সঙ্গে বাস করতেন, তাঁকে সেবা করতেন, এবং যিশুর কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন তাদেঁর থেকে যিশুর মধ্যে অন্তদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পারেন যে তিনি সে সব বলেন নি (জন 14:26)?

যিশুর আসল পরিচয়ের ব্যাপারে প্রশ্নটি কেন এত জরুরী? যিশু ঈশ্বর ছিলেন কি না ছিলেন তাতে এত মাথা ব্যাথার কারণ কি? যিশু যে ঈশ্বরই ছিলেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে যে যদি তিনি ঈশ্বর নাই হন তাহলে তাঁর মৃত্যু সমগ্র পৃথিবীর পাপের প্রায়শ্চিত্বের মূল্য দিতে যথেষ্ট হত না (1 জন2:2)। একমাত্র ঈশ্বরই অনন্ত প্রায়শ্চিত্বের মূল্য দিতে পারেন (রোমান 5:8;2 করিন্থিয়ান্স 5:21)। যিশুকে ঈশ্বর হতেই হবে, যাতে তিনি আমাদের সমস্ত ঋণ শোধ করতে পারেন। যিশুকে মানব হতেই হবে, যাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। একমাত্র যিশুখ্রিষ্টের প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমেই মুক্তি পাওয়া যায়! যিশুর ঈশ্বর তত্ত্বের প্রমাণ তিনিই একমাত্র মুক্তির পথ। যিশুর ঈশ্বর তত্ত্বের কারণ তিনি প্রচার করেছিলেন, “আমিই উপায়, এবং সত্য, এবং জীবন। আমার মাধ্যম ছাড়া কেউই আমার পিতার কাছে আসতে পারবে না"(জন 14:6)।

যিশুকি ঈশ্বর? তিনি কি কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছিলেন?



প্রশ্ন: যিশুকি ঈশ্বর? তিনি কি কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছিলেন?

উত্তর:
বাইবেলে যিশুকে কখনও “আমিই ঈশ্বর” ঠিক এই শব্দে উল্লেখ করা হয় নি। যাই হোক, তার মানে এই নয় যে তিনি প্রচার করেননি যে তিনি ঈশ্বর। উদাহরণস্বরূপ, জন 10:30, তে যিশুর বাণী “আমি এবং পিতা একই ব্যক্তি।“প্রথম দেখাতেই এটা মনে নাও হতে পারে যে ঈশ্বর রূপে দাবী করা হচ্ছে না। যাহোক, তাঁর বিবৃতিতে ইহুদীদের প্রতিক্রিয়াটি লক্ষ্য কর, “আমরা এই সব কারণে তোমাকে পাথর ছুঁড়ে মারছিনা, ইহুদীরা উত্তর দিয়েছিল, মারছি ঈশ্বরের নিন্দা করার জন্য, কারণ তুমি একজন সামান্য মানুষ হয়ে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করছ” (জন 10:33)। ইহুদীরা বুঝেছিল যিশুর বিবৃতি হল নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করার। পরের অনুচ্ছেদগুলিতে যিশু কখনও ইহুদীদের সংশোধন করেন নি এই বলে “আমি নিজেকে কখনই ঈশ্বর বলে দাবী করিনি।“ এটাই নির্দেশ করে যে যিশু সত্যই নিজেকে “আমি এবং পিতা একই ব্যক্তি” বলে ঈশ্বর রূপে প্রচার করেছিলেন (জন 10:30)। জন 8:58 হল আর একটা উদাহরণ। যিশু প্রচার করেছিলেন, আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, আব্রাহাম জন্মাবার আগে থেকেই আমিই আছি!” এর উত্তরে, ইহুদীরা পাথর তুলে আবার যিশুকে মারতে উদ্যত হয়েছিল (জন 8:59)।তাহলে কেন ইহুদীরা যিশুকে পাথর মারতে উদ্যত হয়েছিল যদি না এমন কিছু বলা হয়ে থাকে যাক তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসের উপর আঘাত বলে মনে করেছিল, যেমন, নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করা?

জন 1:1 অনুসারে “শব্দটি ছিল ঈশ্বর। “জন 1:14 বলেন যে “শব্দ মাংসে পরিণত হয়েছিল”। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার করে নির্দেশ করে যে যিশু এই মাংসের মধ্যে ঈশ্বর রূপে ছিছেন। অ্যাক্ট 20:28 আমাদের বলে , “...ঈশ্বরের গীর্জার যাজক হও, যেটা তিনি নিজের রক্তের সঙ্গে বয়ে এনেছিলেন। “কে নিজের রক্ত দিয়ে গীর্জাকে কিনেছিলেন? যিশুখ্রিষ্ট। অ্যাক্ট 20:28 প্রচার করে যে ঈশ্বর নিজের রক্তের দ্বারা গীর্জাকে কিনেছিলেন। অতএব, যিশুই ঈশ্বর!

যিশুর শিষ্য থমাস, যিশুর সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন, “প্রভু এবং আমার ঈশ্বর” বলেন (জন 20:28)। যিশু তাঁকে সংশোধন করেন নি। তিতাস 2:13 আমাদেরকে আমাদের ঈশ্বর এবং পরিত্রাতা – যিশুখ্রিষ্টের আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে উৎসাহিত করেন(2 পিটার 1:1 দেখুন)। হিব্রুস 1:8 এ ফাদার যিশুর সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন, “কিন্তু পুত্র সর্ম্পকে তিনি বলেন, “হে ঈশ্বর , আপনার সিংহাসন অনন্তকাল ধরে চিরস্থায়ী হবে, এবং ন্যয়পরায়ণতা আপনার রাজ্যের রাজদন্ড হবে”।

পুনরুত্থানের সময়ে একজন দেবদূত অ্যাপস্টেল জনকে কেবলমাত্র ঈশ্বরেরই পূজা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন(রেভেলুসান 19:10)। ধর্মগ্রন্থে যিশু বহু সময়েই পূজা পেয়েছেন (ম্যাথিউ 2:11; 14:33; 28:9, 17; লিউক 24:52; জন 9:38)। তিনি কখনও ব্যক্তিদেরকে তার পূজা করার জন্য দোষারোপ করেননি। যদি তিনি ঈশ্বর না হতেন, তাহলে লোকেদেরকে বলতেন তাঁকে পূজা না করতে, দেবদূত পুনরুত্থানের সময়ে যেমন করেছিলেন। ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এবং পঙতিতে যিশুর ঐশ্বরীয় তত্ত্বের যুক্তি দেওয়া আছে।

যিশু যে ঈশ্বরই ছিলেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে যে যদি তিনি ঈশ্বর না হতেন তাহলে তাঁর মৃত্যুকে সমগ্র পৃথিবীর পাপের শাস্তির মূল্য হিসাবে মেটাতে হত না (জন 2:2 এর 1) একমাত্র ঈশ্বরই এই অনন্ত শাস্তির মূল্য মিটিয়ে দিতে পারেন। একমাত্র ঈশ্বরই পৃথিবীর পাপকে ধারণ করতে পারেন (2 কোরিন্থিয়ানস 5:21), মরতে পারেন, এবং পুনরুত্থিত হন – মৃত্যু ও পাপের উর্ধ্বে তাঁর জয়কে প্রমাণ করতে।

ঈশ্বরের গুণাবলীগুলি কি কি? ঈশ্বর কিসের ন্যায়?



প্রশ্ন: ঈশ্বরের গুণাবলীগুলি কি কি? ঈশ্বর কিসের ন্যায়?

উত্তর:
আমরা যখন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি, তখন সুখবর হল যে ঈশ্বর সম্পর্কে অনেককিছু আছে জানার মত! তারা যারা এই ব্যাখ্যা পরীক্ষা করে দেখেছে তারা নিশ্চই সম্পুর্ণ গ্রন্থটি পড়াকে সঠিক মনে করেছে; এবং তারপরে আরো ব্যাখ্যার জন্য ধর্মগ্রন্থের নির্বাচিত কিছু অধ্যায়ে ফিরে গেছে৷ ধর্মগ্রন্থের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণভাবে প্রয়োজনীয়, বাইবেলের অনুমতি ব্যতীত, শব্দের এই সংগ্রহ মানুষের মতাদর্শের থেকে উৎকৃষ্ট নয়, যা কিনা প্রায়শই ঈশ্বরকে বোঝার ক্ষেত্রে ভুল (জন 42:7)৷ এই কথাগুলি বলার মাধ্যমে আমাদের বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ যে ঈশ্বর যেকরম তার থেকে তাঁর প্রকাশ অনেক কম! তাই কখনো কখনো আমরা ব্যর্থ হয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই নকল ঈশ্বরকে স্থাপনা করি, তাঁর পেছনে ছুটি এবং তাঁর পূজা করি (ইক্সোডাস 20:3-5)৷

শুধুমাত্র ঈশ্বর আমাদের সামনে যা উন্মোচিত করতে চান তাই আমরা জানতে পারি৷ ঈশ্বরের একটি অন্যতম গুন হল “আলো”, অর্থাৎ তিনি হলেন নিজের সম্পর্কে স্ব-উন্মোচিত তথ্য (ইশা 60:19, জেম্‍স 1:17)৷ ঈশ্বর যে তাঁর নিজের বিষয়ে জ্ঞান নিজেই উন্মোচন করেন এই সত্যকে অবহেলা করা উচিত নয়, তাই আমাদের কারোরই ঈশ্বরের অন্যান্য গুণাবলীর বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয় (হিব্রুজ 4:1)৷ সৃষ্টি, বাইবেল, এবং শব্দ তৈরি করেছে মানবদেহ (যীশু খ্রীষ্ট) যা কিনা ঈশ্বর কিরকম তা আমাদের জানতে সাহায্য করে৷

এইভাবে আমরা ঈশ্বরকে বুঝতে পারি যে তিনিই হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং আমরা তাঁর সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র (জেনেসিস 1:1 স্লাম 24:1)৷ ঈশ্বর বলেন যে মানুষ তাঁরই প্রতিচ্ছবিতে নির্মিত৷ মানুষ সকল সৃষ্টির ওপরে এবং তাকে সব কিছুর ওপরের কতৃত্ব দেওয়া হয়েছে (জেনেসিস 3:17-18)৷ সৃষ্টিতে মানুষের ‘পতন’ যেমন আছে তেমনই আছে ঈশ্বরের কার্যের ঝলক (জেনেসিস 3:17-18; রোমানস 1:19-20)৷ সৃষ্টির ব্যাপকতা, জটিলতা, সৌন্দর্য এবং আদেশ থেকে আমরা ঈশ্বরের কৃপার সম্পর্কে বুঝতে পারি৷

ঈশ্বরের কিছু নাম পড়লে হয়ত ঈশ্বর কিরকম তা আমাদের পক্ষে জানা সহজ হবে৷ সেই নামগুলি হল :

ইলোহিম – শক্তিশালী, পবিত্র (জেনেসিস 1:1)
অ্যাডোনাই – প্রভূ, প্রভূ এবং ভৃত্যের সম্পর্ক স্থাপনকারী (এক্সোডাস 4:10,13)
এল এলিয়ন – সর্বোচ্চ, সর্বশক্তিমান (জেনেসিস 14:20)
এল রয় – এমন শক্তিমান যিনি সবকিছু দেখেন (জেনেসিস 16:13)
এল সাদ্দাই – কৃপাময় ঈশ্বর (জেনেসিস 17:1)
এল ওলাম – চিরন্তন ঈশ্বর (ইশা 40:28)
য়াওয়েহ – “আমিই” প্রভূ, অর্থাৎ শাশ্বত-অস্তিত্ব ঈশ্বর (এক্সোডাস 3:13,14)৷

আমরা এখন ঈশ্বরের আরো গুনাবলীর উন্মোচন করবো; ঈশ্বর শাশ্বত, অর্থাৎ তাঁর কোনো সূচনা নেই এবং তাঁর অস্তিত্ব কখনো শেষ হয় না৷ তিনি অমর, অসীম (ডিউটারোনমি 33:27; স্লাম 90:2; টিমোথি 1:17)৷ ঈশ্বর পরিবর্তনাতীত, অর্থাৎ তিনি অপরিবর্তনশীল; অর্থাৎ ঈশ্বর হলেন সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য এবং ভরসাযোগ্য (মালাচি 3:6; নাম্বারস 23:19; স্লাম 102:26,27)৷ ঈশ্বর অতুলনীয়, অর্থাৎ এই পৃথিবীতে এমন কেউ নেই বা এমন কোনো কাজ নেই যার সাথে তাঁর তুলনা হয়; তিনি সব কিছুর শ্রেষ্ঠ এবং পূর্ণ (2 স্যামুয়েল 7:22; স্লাম 86:8; ইশা 40:25; ম্যাথিউ 5:48)৷ ঈশ্বর দুর্জ্ঞেয়, অর্থাৎ তিনি অতল, খোঁজার অসাধ্য, তাঁকে খোঁজার অর্থ তাঁকে সম্পুর্ণভাবে জানা (ইশা 40:28; স্লাম 145:3; রোমানস 11:33,34)৷

ঈশ্বর ন্যায়পরায়ন, অর্থাৎ তিনি কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি পক্ষপাতশীল নন (ডিউটারোনমি 32:4; স্লাম 18:30)৷ ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, অর্থাৎ তাঁর অসীম ক্ষমতা; তিনি সেই সকল কাজ করতে পারেন যা তাঁকে খুশী করে, কিন্তু তাঁর সকল কাজ তাঁর চারিত্রিক অন্যান্য গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ (রিভিলেশান 19:6; জেরেমিয়া 32:17,27)৷ ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, অর্থাৎ তিনি সর্বত্র রয়েছেন, সব জায়গায়; তার মানে এই নয় যে ঈশ্বরই সব (স্লাম 139: 7-13; জেরেমিয়া 23:23)৷ ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, অর্থাৎ তিনি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সব জানেন, এমনকি আমরা যেকোন মুহূর্তে কি ভাবছি তাও তিনি জানেন; কারণ তিনি সব জানেন এবং তাঁর বিচার সব সময় সঠিক হয় (স্লাম 139:1-5; প্রোভার্বস্ 5:21)৷

ঈশ্বর এক, অর্থাৎ তার মানে এই নয় যে আর কেউ নেই, তবে তিনি একাই আমাদের গভীর চাহিদা এবং হৃদয়ের সমস্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন, এবং তিনি একাই আমাদের শ্রদ্ধা এবং পূজার যোগ্য (ডিউটারোনমি 6:4)৷ ঈশ্বর ন্যায়বান, অর্থাৎ ঈশ্বর কখনো অন্যায় করেন না এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না; কারণ আমাদের পাপকে ক্ষমা করার জন্য তিনি সব সময় ন্যায় এবং বিচার করে থাকেন, যখন আমাদের পাপের ফল প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট ভোগ করেছিলেন তখন তিনি ঈশ্বরের বিচারকে প্রতক্ষ্য করেছিলেন (এক্সোডাস 9:27; ম্যাথিউ 27:45-46; রোমানস 3:21-26)৷

ঈশ্বর সার্বভৌম, অর্থাৎ তিনি সর্বোচ্চ শক্তিমান; জ্ঞাতসারে বা জ্ঞাতসারে তাঁর সমস্ত সৃষ্টি একত্রিত হয়েছে, এবং তাঁর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে না (স্লাম 93:1; 95:3; জেরেমিয়া 23:20)৷ ঈশ্বরই আত্মা, অর্থাৎ তিনি অদৃশ্য (জন 1:18; 4:24)৷ ঈশ্বর ত্রয়ী, অর্থাৎ তিনি একের মধ্যে তিন, যাঁর অস্তিত্ব, শক্তি এবং মহিমা সমান৷ লক্ষ্য কর যে ধর্মগ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে লেখা আছে যে ‘নাম’ একটি তবে তার মধ্যে তিনজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয়েছে - “পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা” (ম্যাথিউ 28:19; মার্ক 1:9-11)৷ ঈশ্বরই সত্য, অর্থাৎ তিনি যা তিনি তাই, তিনি সর্বদা অমলিন থাকবেন এবং কখনো মিথ্যা বলবেন না (স্লাম 117:2; স্যামুয়েল 15:19)৷

ঈশ্বর পবিত্র, অর্থাৎ তিনি সকল নৈতিক মলিনতা থেকে দৃঢ়তার সাথে দূরে থাকেন৷ ঈশ্বর সমস্ত অশুভ জিনিস দেখতে পান এবং তা তাঁকে ক্রুদ্ধ করে; ধর্মগ্রন্থে পবিত্রতার সাথে প্রায়ই আগুনের কথা বলা হয়৷ ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি অগ্নি ধারণ করতে পারেন (ইশা 6: 3; হাবাক্কুক 1:13; এক্সোডাস 3:2,4,5; হিব্রুজ 12:29)৷ ঈশ্বর করুণাময় – এটির সাথে রয়েছে তাঁর উৎকৃষ্টতা, মহত্ব, করুণা এবং ভালোবাসা – যেগুলি শব্দ যা তাঁর কৃপাকে ব্যাখ্যা করে৷ এটি যদি ঈশ্বরের করুণার জন্য না হয় তবে তাঁর অন্যান্য গুণাবলী আমাদেরকে তাঁর কাছ থেকে পৃথক করে৷ তবে এরকম হয় না, তাই তিনি আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে জানেন (এক্সোডাস 34:6; স্লাম 31:19; পিটার 1:3; জন 3:16; জন 17:3)৷

ঈশ্বরের আকার সম্পর্কিয় উত্তর খোঁজার জন্য এটি ছিল শুধুমাত্র একটি সহজ প্রয়াস৷ তাঁর সন্ধানে বহির্গত হবার জন্য এটি আমাদের উৎসাহিত করে ( জেরেমিয়া 29:13)৷

বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাণী?



প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাণী?

উত্তর:
আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র এটাই প্রমান করে না যে আমরা কিভাবে বাইবেলকে দেখি এবং আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব কতটা, এও প্রমান করে যে এই গ্রন্থের একটি শাশ্বত প্রভাব রয়েছে আমাদের জীবনের ওপর৷ যদি বাইবেল সত্যিই ঈশ্বরের বাণী হয়, তবে আমাদের সেই গ্রন্থকে লালন করা উচিত, তা পড়া উচিত, এবং সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করা উচিত৷ যদি বাইবেল ঈশ্বরের বাণী হয় তবে এই গ্রন্থকে উপেক্ষা করার অর্থ হল স্বয়ং ঈশ্বরকে উপেক্ষা করা৷

আসলে ঈশ্বর তাঁর অস্তিত্বের বিশদ ব্যাখ্যা দিতে এবং আমাদের জন্য তাঁর করুণার প্রমানস্বরূপ বাইবেল আমাদের দিয়েছেন৷ “দৈব প্রত্যাদেশ” এই শব্দটির অর্থ হল, ঈশ্বরের রূপ কিরকম তা তিনি সাধারণ মানুষকে জানাতে চেয়েছেন এবং এও জানাতে চেয়েছেন যে কিভাবে আমরা তাঁর সাথে সঠিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি৷ এগুলি সেই সমস্ত জিনিস যা আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জানতে পারি না যতক্ষণ না ঈশ্বর বাইবেলে তা ঐশ্বরিকভাবে প্রকাশ করেছেন৷ যদিও ঈশ্বরের নিজের সম্পর্কে এই প্রকাশ ঘটেছে ধীরে ধীরে প্রায় 1500 বছর ধরে, তাই এই গ্রন্থে সর্বদাই এমন বাণী প্রকাশিত হয়েছে যা আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে সঠিক সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং তাঁর সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে৷ সত্যিই যদি বাইবেল ইশ্বরের বাণী হয় তবে, এই গ্রন্থটির প্রতি আমরা বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার এবং নীতির জন্য চূড়ান্তভাবে আস্থা রাখতে পারি৷

যে প্রশ্নটি আমাদের নিজেদেরকে করা উচিত তা হল আমরা কিভাবে জানতে পারবো যে বাইবেল কোনো সাধারণ গ্রন্থ নয়, বরং ঈশ্বরের বাণী? আজ পর্যন্ত যত ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়েছে তার থেকে বাইবেল কিভাবে পৃথক এবং অদ্বিতীয়? বাইবেল যে সত্যিই ঈশ্বরের বাণী তার কি কোনো প্রমান আছে? আমরা যদি সত্যিই পরীক্ষা করতে চাই যে বাইবেল ঈশ্বরের বাণী যা কিনা ঐশ্বরিকভাবে উদ্বুদ্ধ এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ধর্মাচরণের জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য তাহলে আমাদের সামনে এই সমস্ত প্রশ্নগুলি আসবেই৷

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বাইবেল ঈশ্বরের বাণী হিসেবে দাবী রাখে৷ টিমোথির প্রতি পলের সুপারিশমূলক আবেদনে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবেই রয়েছে : “... শৈশব থেকেই তোমরা এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জান, যা কিনা তোমাদের প্রভূ যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করার বুদ্ধি দেয়৷ সমস্ত ধর্মগ্রন্থই ঈশ্বরের-মুখনিঃসৃত, ফলে ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষেরা যাতে সমস্ত ভালো কাজ করার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে তাই এই গ্রন্থগুলি ন্যায় করার জন্য আমদের শিক্ষা, তিরস্কার, সংশোধন ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দিয়ে থাকে”(2 টিমোথি 3:15-17)৷

আরও বেশ কিছু বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ প্রমান আছে যার সাহায্যে প্রমানিত হয় যে বাইবেল ঈশ্বরের বাণী৷ আভ্যন্তরীণ প্রমান হল সেই বস্তু যা বাইবেলে পাওয়া যায় এবং যার সাহায্যে এই গ্রন্থের ঐশ্বরিক উৎস প্রমানিত হয়৷ বাইবেল যে সত্যিই ঈশ্বরের বাণী তার অন্যতম প্রমান হল এই গ্রন্থের একতা৷ যদিও এই গ্রন্থটি ছেষট্টিটি গ্রন্থের সমন্বয়, তিনটি মহাদেশে লেখা, তিনটি আলাদা ভাষায়, প্রায় 1500 বছর ধরে লেখা, 40 জনের বেশী লেখকের দ্বারা রচিত যারা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থান থেকে এসেছিলেন, তবুও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই গ্রন্থটি কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়া একইরকম৷ এই একতা অন্যান্য গ্রন্থের তুলনায় অদ্বিতীয়, এবং এটিই ঐশ্বরিক উৎসের প্রমান তাই ঈশ্বর এমনভাবে মানুষকে প্রভাবিত করছেন যে তাঁর প্রতিটি শব্দ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে৷

আরেকটি আভ্যন্তরীণ প্রমান যা নিশ্চিত করে যে বাইবেল ঈশ্বরের বাণী তা হল, এর প্রতিটি পৃষ্ঠায় লিখিত ভবিষ্যদ্বাণী৷ বাইবেলে উল্লেখিত রয়েছে প্রচুর ভবিষ্যদ্বাণী যেখানে বর্ণিত হয়েছে ইসরায়েল সহ প্রতিটি আলাদা দেশের ভবিষ্যৎ, কিছু নির্দিষ্ট শহরের ভবিষ্যৎ, মানবজগতের ভবিষ্যৎ, এবং তাতে লেখা রয়েছে যে এমন একজন আসবেন যিনি হবেন ভবিষ্যতের মশিহা, যিনি শুধুমাত্র ইসরায়েলের নয়, যারা তাঁকে বিশ্বাস করবে তিনি হবেন সেরকম সকলের মুক্তিদাতা৷ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি নস্ট্রাডামুস বা অন্য ধর্মগ্রন্থে প্রকাশিত ভবিষ্যদ্বাণীর মত নয়, বাইবেলে রচিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি বিশদভাবে লেখা রয়েছে এবং কখনোই মিথ্যা হয় না৷ শুধুমাত্র ওল্ড টেস্টামেন্টেই প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে রচিত ভবিষ্যদ্বাণীর সংখ্যা প্রায় তিনশ’রও বেশী৷ পূর্বে শুধুমাত্র এটাই বলা হয়নি যে তিনি কোথায় এবং কোন্ পরিবারে জন্মগ্রহণ করবেন, এটাও বলা ছিল যে কিভাবে তাঁর মৃত্যু হবে এবং মৃত্যুর তিনদিন পরে সেখান থেকে তিনি পুনরুত্থান করবেন৷ তাই বাইবেলে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলির সত্য হয়ে ওঠাকে বর্ণনা করার জন্য এটা স্বীকার করতেই হবে যে এই গ্রন্থটি একটি ঐশ্বরিক উৎস৷ আর অন্য কোনো ধর্মীয় গ্রন্থে এরকম ভবিষ্যদ্বাণী নেই যা বাইবেলে রয়েছে৷

বাইবেলের এই ঐশ্বরিক উৎপত্তির তৃতীয় কারনটি হল এই গ্রন্থের অদ্বিতীয় জ্ঞান ও ক্ষমতা৷ কারন এই প্রমানটি প্রথম দুইটি প্রমানের চেয়ে অনেক বেশি বিষয়ভিত্তিক, এটি বাইবেলের ঐশ্বরিক উৎপত্তির একটি শক্তিশালী সাক্ষ্য৷ অন্য যেকোনো রচিত গ্রন্থের থেকে বাইবেলে রয়েছে অদ্বিতীয় জ্ঞান৷ এই শক্তি প্রমানিত হয় যখন আমরা দেখি যে ঈশ্বরের বাণীর এই অতিপ্রাকৃতি শক্তির প্রভাবে অগুনিত মানুষের জীবন পরিবর্তিত হয়ে গেছে৷ মাদ্যাশক্তরা এই বাণীর দ্বারা সুস্থ হয়ে উঠেছে, সমকামীরা স্বাধীন হয়ে গেছে, পরিত্যক্ত এবং পরিশ্রান্তরা নবজীবন লাভ করেছে, শত শত অপরাধীরা পাপমুক্ত হয়েছে, পাপীরা তিরস্কৃত হয়েছে, এবং এই গ্রন্থের পড়ার ফলে ঘৃণা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে৷ বাইবেলে যে শক্তিশালী এবং রূপান্তরকরণের ক্ষমতা রয়েছে তা প্রমান করে যে এই গ্রন্থটি সত্যিই ঈশ্বরের বাণী৷

তাছাড়াও কিছু বাহ্যিক প্রমান আছে যা নির্দেশ করে যে বাইবেল সত্যিই ঈশ্বরের বাণী৷ এর একটি অন্যতম প্রমান হল বাইবেলের ঐতিহাসিকত্ব৷ কারন বাইবেলে রয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ, এর সত্যতা এবং যথার্থতা অন্য যেকোনো ঐতিহাসিক নথির মতই প্রমানিত৷ প্রত্নতাত্তিক প্রমান এবং অন্যান্য লেখা উভয়ের দ্বারা বাইবেলের সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্য সঠিক এবং সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে৷ এমনকি, সমস্ত প্রত্নতাত্তিক এবং লিপি প্রমান করে যে বাইবেল হল প্রাচীন যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নথি৷ আসল ঘটনা হল যে বাইবেল সঠিকভাবে এবং সত্যতার সাথে ঐতিহাসিক প্রমানসাপেক্ষ ঘটনাগুলিকে নথিবদ্ধ করেছে, আর তাই এই গ্রন্থের সত্যতা প্রমানিত, এবং এই গ্রন্থের ধর্মীয় বিষয় এবং উপদেশাবলী ঈশ্বরের বাণী হিসেবে এই গ্রন্থের দাবিকে ন্যায্যতা দান করে৷

বাইবেল যে ঈশ্বরের বাণী তার আরেকটি বাহ্যিক প্রমান হল যে লেখকদের বিশুদ্ধতা৷ ঈশ্বর মানুষকে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবহার করেছেন যারা তাঁর শব্দগুলিকে লিপিবদ্ধ করেছে, একথা আগেই বলা হয়েছে৷ সেই সকল মানুষের জীবন সম্পর্কে জানার পরে আমরা কখনোই বলতে পারি না যে তারা সৎ এবং খাঁটি ছিল না৷ তাদের জীবন পরীক্ষা করলে আমরা জানতে পারি যে তারা নিজেদের বিশ্বাসের জন্য যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু বরণ করতেই রাজি ছিল, তাই এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই খুব সাধারণ অথচ সৎ মানুষেরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করত যে ঈশ্বর তাদের সাথে কথা বলেছেন৷ যিনি নিউ টেস্টামেন্ট লিখেছেন এবং আরও কয়েকশ বিশ্বাসী মানুষ (1 কোরিন্থিয়ান্‍স 15:6) জানতেন তাদের বার্তার সত্যতা কারন প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে ফিরে আসার পর তারা তাঁকে দেখেছে এবং তাঁর সাথে সময় কাটিয়েছে৷ মৃত্যু থেকে ফিরে আসা যীশুকে দেখার ঘটনা তাদের ওপর অত্যধিক প্রভাব ফেলেছে৷ তারা ভয়ে লুকিয়ে থাকার পরিবর্তে ঈশ্বর যে বার্তা তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন সেই বার্তা প্রচার করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকে শ্রেয় মনে করেছে৷ তাদের জীবন এবং মৃত্যু এই ঘটনাকে পরীক্ষা করে যে বাইবেল আসলে ঈশ্বরের বাণী৷

বাইবেল যে ঈশ্বরের বাণী তার একটি চূড়ান্ত প্রমান হল, এই গ্রন্থটি ধ্বংসাতীত৷ এই গ্রন্থের গুরুত্ব এবং এর ঈশ্বরের বাণী হিসেবে দাবী করার কারনেই, বাইবেলকে সহ্য করতে হয়েছে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণ এবং অন্য যেকোনো গ্রন্থের থেকে এই গ্রন্থটিকে ধ্বংস করার অনেক বেশি চেষ্টা করা হয়েছে৷ ডায়োক্লেটিয়ানের মত পূর্বের রোমান রাজা থেকে শুরু করে, বামপন্থী শাসক এবং আধুনিক যুগের নাস্তিক এবং অজ্ঞবাদীদের আক্রমণ, বাইবেল প্রতিরোধ করেছে এবং স্থায়ী হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত বিশ্বে সর্বাধিক প্রকাশিত গ্রন্থ৷

বিভিন্ন সময়ে, নাস্তিকরা বাইবেলকে একটি পুরানের গ্রন্থ হিসেবে মেনে নিয়েছে, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব এটিকে প্রমান করতে চেয়েছে একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ হিসেবে৷ বিরোধীরা এর শিক্ষার পদ্ধতিকে আক্রমণ করেছে আদিম এবং প্রাচীন হিসেবে, কিন্তু এই গ্রন্থের নৈতিক এবং আইনগত ধারণা এং শিক্ষাতে রয়েছে একটি যথার্থ্য প্রভাব যা সমগ্র বিশ্বের সমাজ এবং সংস্কৃতির ওপর প্রভাব ফেলেছে৷ এই গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের দ্বার আক্রান্ত হয়েছে, তবু আজও এই গ্রন্থটি ততটাই সত্য এবং সময়োপযোগি রয়েছে যতটা এই গ্রন্থ যেদিন প্রথম লেখা হয়েছিল সেদিন ছিল৷ এই গ্রন্থটি বিগত 2000 বছর ধরে অগুনিত মানুষের জীবন এবং সংস্কৃতিকে পরিবর্তিত করেছে৷ বিরোধীরা কিভাবে এই গ্রন্থটিকে আক্রমণ, ধ্বংস এবং অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছে তা কোনো সমস্যাই নয়, বাইবেল ঠিক একই রকম শক্তিশালী, সত্য, এবং এত আক্রমণের পরেও ততটাই সময়োপযোগী রয়েছে৷ গ্রন্থটিকে অশুদ্ধ করার সমস্ত চেষ্টা, আক্রমণ এবং ধ্বংস করার চেষ্টা সত্ত্বেও এই গ্রন্থের শুদ্ধতা সংরক্ষিত রয়েছে, আর এই ঘটনাই প্রমান করে যে এই গ্রন্থটি ঈশ্বরের বাণী এবং অলৌকিকভাবে তাঁর দ্বারা রক্ষিত৷ এই ঘটনার দ্বারা আমরা আশ্চর্য হই না যে, কিভাবে বাইবেল আক্রান্ত হয়েছে, এই গ্রন্থটি সর্বদাই অপরিবর্তনীয় এবং অক্ষত রয়েছে৷ আসলে, প্রভূ যীশু বলেছেন, “স্বর্গ এবং মর্ত্যের অবসান হবে, কিন্তু আমার বাণী কখনোই শেষ হবে না” (মার্ক 13:31)৷ সমস্ত প্রমানগুলি দেখার পর যে কেউ নির্দ্বিধায় বলতে পারে যে হ্যাঁ, বাইবেল সত্যই ঈশ্বরের বাণী৷

খ্রীষ্টধর্ম কি এবং খ্রীষ্টানরা কি বিশ্বাস করে?



প্রশ্ন: খ্রীষ্টধর্ম কি এবং খ্রীষ্টানরা কি বিশ্বাস করে?

উত্তর:
1 কোরিন্থিয়ান্‍স 15:1-4 বলে, “এখন, ভাইসকল, আমি তোমাদের গস্‍পেলের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যে ধর্মউপদেশাবলী তোমাদের দিয়েছি, যা তোমরা গ্রহণ করেছ এবং যার ওপর তোমরা আস্থা রেখেছ৷ আমি যে ধর্মউপদেশাবলী তোমাদের দিয়েছি যদি তোমরা তার ওপর নিজেদের আস্থা রাখ, তবে এই গস্‍পেলের জন্য তোমরা রক্ষা পেয়েছ৷ তাছাড়া তোমরা নিষ্ফলভাবে বিশ্বাস করেছ৷ আমি যা পেয়েছি তা প্রথমেই তোমাদের উদ্দেশ্যে দান করেছি : ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী প্রভূ খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে, এবং ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী মৃত্যুর তিনদিন পরে তাঁর উত্তরণ ঘটেছে৷”

সংক্ষেপে এই হল খ্রীষ্টান ধর্মের মূল বিশ্বাস৷ সমস্ত বিশ্বাসের মধ্যে অদ্বিতীয়, খ্রীষ্টান ধর্ম ধর্মাচরণ করার থেকেও ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে বেশী বিশ্বাসী৷ “করণীয়” এবং “অকরণীয়” এর তালিকাতে অনুগামী থাকার চেয়ে একজন খ্রীষ্টানের মূল লক্ষ্য হল ঈশ্বর বা পিতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা৷ এই সম্পর্কটি সম্ভব প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের অবদানের জন্য এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা খ্রীষ্টানদের জীবন নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য৷

খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যে বাইবেল হল ঈশ্বরের প্রেরণা সঞ্চারক এবং সহজাত বাণী, এবং এর শিক্ষাই হল চূড়ান্ত জ্ঞান (2 টিমোথি 3:16; 2 পিটার 1:20-21)৷ খ্রীষ্টানরা একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যিনি তিন জন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান, পিতা, পুত্র (যীশু খ্রীষ্ট), এবং পবিত্র আত্মা৷

খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যে এই মানবসমাজ নির্দিষ্টভাবে উৎপন্ন করা হয়েছে শুধুমাত্র ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য, কিন্তু পাপ মানুষকে ঈশ্বরের থেকে আলাদা করে (রোমান্‍স 3:23, 5:12)৷ খ্রীষ্টান ধর্ম শেখায় যে প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে এসেছেন, সম্পূর্ণ ঈশ্বররূপে, অথচ জীবন যাপন করেছেন সম্পূর্ণ মানুষের মত (ফিলিপিয়ান্‍স 2:6-11), এবং ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন৷ খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যে ক্রুশে তাঁর মৃত্যুর পরে, প্রভূ খ্রীষ্টকে কবর দেওয়া হয়েছিল, তিনি সেখান থেকে জেগে ওঠেন, এবং এখন পিতার প্রধান সহকারী হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন, ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং ঈশ্বরের মধ্যে সর্বদা মধ্যস্থতা করছেন (হিব্রু 7:25)৷ খ্রীষ্টান ধর্ম দাবী করে যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে প্রভূ যীশুর মৃত্যুর মাধ্যমে সকল মানুষের দ্বারা কৃত পাপের ফলে যে ঋণ হয়েছিল তা শোধ করা হয়েছে এবং এর ফলে ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যের সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছে (হিব্রু 9:11-14, 10:10; রোমান্‍স 5:8, 6:23)৷

রক্ষা পাওয়ার জন্য, প্রভূ যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যা করেছেন সকলের তার প্রতি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস রাখা প্রয়োজনীয়৷ যদি কেউ বিশ্বাস করে যে প্রভূ খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁর নিজের স্থানে এবং নিজের পাপের মূল্য দিতে, এবং আবার মৃত্যু থেকে জেগে ওঠেন, তবে সেই ব্যক্তি রক্ষা পাবে৷ মুক্তি পাওয়ার জন্য কারো কিছু করার নেই৷ কেউই নিজে থেকে ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য “এত ভালো” হতে পারে না, কারন আমরা সকলেই পাপী (ইশা 53:6, 64:6-7)৷ দ্বিতীয়ত, আর কিছু করার নেই, কারন প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট সকলই করে ফেলেছেন! তিনি যখন ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন, যীশু বলেছেন, “সব কাজ শেষ” (জন্ 19:30)৷

কেউ যদি একবার ক্রুশবিদ্ধ প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে মুক্তিলাভের জন্য কারো আর কিছু করার নেই, তেমনি নিজের মুক্তি হারানোর জন্যও কারো কিছু করার নেই কারন সকল কাজ প্রভূ যীশুর দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে! যে মুক্তি পায় তার ওপর মুক্তিলাভ করার পন্থা নির্ভরশীল নয়৷ জন্ 10:27-29 বলেছে “আমার ভেড়া আমার কথা শোনে; আমি তাদের জানি এবং তারা আমাকে অনুসরণ করে৷ আমি তাদের শাশ্বত জীবন দিয়েছি, এবং তারা কখনোই বিনষ্ট হবে না; কেউই তাদের আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না৷ আমার পিতা, যিনি আমায় তাদের দিয়েছেন, সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ; কেউই আমার পিতার কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নিতে পারবে না৷”

কেউ কেউ মনে করে, “এটা খুব ভালো – একবার আমি বেঁচে গেলে, আমি সে সকল করতে পারি যার দ্বারা আমি ঈশ্বরকে খুশি করতে পারব এবং মুক্তির পথ হারাবো না!” কিন্তু কাউকে খুশি করার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া যাবে না৷ পুরনো পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যমে মুক্তিলাভ করা যাবে না এবং স্বাধীনভাবে ঈশ্বরের সাথে সঠিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে৷ যখন আমরা পাপ করার জন্য বাধ্য ছিলাম, আমরা এখন প্রভূ খ্রীষ্টের দাসে পরিণত হয়েছি (রোমান্‍স 6:15-22)৷ যতদিন এই পৃথিবীতে আস্তিকরা থাকবে তাদের পাপ নিয়ে, সেখানে পাপ দানের একটি বিবাদ চলতে থাকবে৷ যদিও, খ্রীষ্টানরা তাদের জীবনে পাপের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে ঈশ্বরের বাণী প্রয়োগ করে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে (বাইবেল), এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে – সেটা হল, আত্মার প্রভাব স্বীকার করে এবং সকল পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়ার দ্বারা এবং আত্মার শক্তির দ্বারা এবং ঈশ্বরের বাণীকে মান্য করে৷

তাই, যেখানে বেশিরভাগ ধর্মে কোনো ব্যক্তির জন্য করণীয় এবং অকরণীয় কাজের তালিকা রয়েছে, সেখানে খ্রীষ্টানধর্ম হল প্রভূ খ্রীষ্টে বিশ্বাস যিনি আমাদের পাপের ফলস্বরূপ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং পুনরুত্থিত হয়েছেন৷ তোমাদের পাপের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এবং তোমরা এখন ঈশ্বরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে পার৷ তোমরা এখন নিজেদের পাপী মনোবৃত্তির ওপর জয়লাভ করতে পার এবং ঈশ্বরের শিষ্য ও অনুগামী হতে পার৷ এটিই হল আসল বাইবেল সমর্থিত খ্রীষ্টান ধর্ম৷

খ্রীষ্টানদের কি ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতি মান্য করা উচিৎ?



প্রশ্ন: খ্রীষ্টানদের কি ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতি মান্য করা উচিৎ?

উত্তর:
এই বিষয়টি বোঝার জন্য এটা জানা প্রয়োজন যে ওল্ড টেস্টামেন্টের এই নীতিগুলি তৈরি হয়েছিল ইসরায়েলস-এর জন্য, খ্রীষ্টানদের জন্য নয়৷ কিছু নীতি ইসরায়েলীদের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল ঈশ্বরকে কিভাবে মান্য এবং খুশী করতে হবে তা জানানোর জন্য (উদাহরণস্বরূপ, মোসেজের দশ বিধান)৷ কিছু নীতি ইসরায়েলীদের শেখাত কিভাবে ঈশ্বরের অর্চনা করতে হয় এবং কিভাবে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় (আত্মত্যাগের পদ্ধতি)৷ কিছু নীতি ইসরায়েলীদের শেখাত কিভাবে নিজের দেশ বা জাতিকে সকলের থেকে উন্নত করে রাখা যায় (খাদ্য এবং পোষাক-পরিচ্ছদের নীতি)৷ বর্তমানে ওল্ড টেস্টামেন্টের কোনো নীতিই আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়৷ যখন প্রভূ যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন, তিনি ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর নীতিগুলির সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন (রোমান্‍স 10:4; গ্যালাটিয়ান্‍স 3:23-25; এফেসিয়ান্‍স 2:15)৷

ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতির পরিবর্তে, আমরা এখন প্রভূ খ্রীষ্টের নীতির অধীন রয়েছি (গ্যালাটিয়ান্‍স 6:2), তা হল “তোমার প্রভূ ঈশ্বরকে হৃদয় এবং সমগ্র আত্মা এবং চিন্তা দিয়ে ভালোবাস... এবং তোমার প্রতিবেশীকেও নিজের মত ভালোবাস” (ম্যাথিউ 22:37-39)৷ আমরা যদি এই দুইটি নির্দেশ মেনে চলি, তবে প্রভূ খ্রীষ্ট আমাদের জন্য যা চান তা আমরা পূরণ করতে পারব : “সমস্ত নীতি এবং উপদেশাবলী এই দুইটি শাস্ত্রীয় নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল” (ম্যাথিউ 22:40)৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলি আজকের দিনে অপ্রাসঙ্গিক৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের অনেক নীতিই এই বিভাগে পড়ে যে “ঈশ্বরকে ভালোবাস” এবং “তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাস৷” ঈশ্বরকে এবং তোমার প্রতিবেশীকে কিভাবে ভালোবাসতে হবে তা জানার জন্য ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলি দিক নির্দেশকের কাজ করতে পারে৷ একই সাথে, যদি আমরা বলি যে ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলি বর্তমানে খ্রীষ্টান ধর্মে প্রয়োগ করা হয় তবে তাও ভুল হবে৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলি হল একটি একক (জেম্‍স 2:10)৷ এগুলি প্রয়োগ করা হোক বা নাই হোক৷ যদি খ্রীষ্ট আত্মত্যাগের পদ্ধতির মত কয়েকটি নীতি পূরণ করেন তবে তিনি সকল নীতিই পূরণ করবনে৷

“এটি হল ঈশ্বরের জন্য প্রেম : তাঁর নির্দেশগুলি মান্য করা৷ এবং তাঁর নির্দেশগুলি কখনোই গুরুভার নয়” (1 জন্ 5:3)৷ মোসেজের দশটি বিধান হল অবশ্যই সমগ্র ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলির সারসংক্ষেপ৷ দশটি বিধানের নয়টি স্পষ্টভাবে নিউ টেস্টামেন্টে পুনরায় লেখা হয়েছে (সাবাথ্ দিবস পালন ছাড়া বাকি সবগুলি নীতি)৷ অবশ্যই, আমরা যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তবে আমরা কখনোই কৃত্রিম ঈশ্বরকে পূজা করবো না অথবা মূর্তির সামনে মাথা নত করবো না৷ আমরা যদি আমাদের প্রতিবেশীদের ভালোবাসি তবে আমরা তাদের খুন করবো না, তাদের কাছে মিথ্যা বলবো না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচার করবো না, অথবা তাদের যা আছে তাতে লোভ করবো না৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলির মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে তাদের নীতিগুলি পালন করার অক্ষমতার জন্য অপরাধী প্রতিপন্ন করা এবং আমাদের মুক্তিদাতা হিসেবে প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করা (রোমান্‍স 7:7-9; গ্যালাটিয়ান্‍স 3:24)৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের নীতিগুলি কখনোই সমগ্র বিশ্বের সবসময়ের এবং সকল মানুষের জন্য ঈশ্বরের দ্বারা পরিকল্পিত নীতি নয়৷ আমরা আছি ঈশ্বরকে এবং প্রতিবেশীদের ভালোবাসতে৷ আমরা যদি এই দুইটি নির্দেশ বিশ্বাসের সাথে পালন করি, তবে ঈশ্বর আমাদের কাছে যা চান তা সবই করতে পারবো৷

খ্রীষ্টের দেবত্ব কি বাইবেল সমর্থিত?



প্রশ্ন: খ্রীষ্টের দেবত্ব কি বাইবেল সমর্থিত?

উত্তর:
যীশুখ্রীষ্টের নিজের সম্পর্কে নির্দিষ্ট দাবিগুলোর সাথে, তাঁর শিষ্যরা তাঁর দেবত্বকেও স্বীকার করেছে৷ তারা দাবি করে যে, প্রভূ যীশুর পাপ ক্ষমা করার অধিকার আছে – যা শুধুমাত্র ঈশ্বরই করতে পারেন – কারন ভগবানের মত যিনি পাপের দ্বারা মর্মাহত হন (অ্যাক্টস্ 5:31; কোলোসিয়ান্‍স 3:13; জেরেমিয়া 31:34)৷ শেষের দাবিটির সাথে নিকট সম্পর্কযুক্ত হল, যীশু খ্রীষ্টই তিনি যিনি পারবেন “জীবিত এবং মৃতকে বিচার করতে” (2 টিমোথি 4:1)৷ থমাস্ চিৎকার করে যীশু খ্রীষ্টকে বলেছে, “আমার প্রভূ এবং আমাক ঈশ্বর!” (জন্ 20:28)৷ পল্ বলেছেন “মহান ঈশ্বর এবং মুক্তিদাতা” (টাইটাস 2:13) এবং এও নির্দেশ করেছেন যে, পুনর্জন্মের পূর্বে যীশু “ঈশ্বরের আকারে” বিরাজমান ছিলেন (ফিলিপিয়ান্‍স 2:5-8)৷ ঈশ্বর বা পিতা প্রভূ যীশু সম্পর্কে বলেছেন, “আপনার রাজসিংহাসন, হে ঈশ্বর চিরকাল এবং সবসময়ের জন্য বিদ্যমান থাকবে” (হিব্রু 1:8)৷ জন্ বলে যে, “সৃষ্টির আদিতে ছিল শব্দ, এবং শব্দ ছিল ঈশ্বরের সাথে, এবং শব্দই ছিল [যীশু] ঈশ্বর” (জন্ 1:1)৷ ধর্মগ্রন্থের উদাহরণগুলি আমাদের শেখায় যে খ্রীষ্টের দেবত্ব অসীম (দেখ রেভেলেশান 1:17, 2:8, 22:13; কোরিন্থিয়ান্‍স 10:4; 1 পিটার 2:6-8; স্লাম 18:2; 1 পিটার 5:4; হিব্রুস্ 13:20), এমনকি উপরোক্ত যে কোনো একটি অংশও প্রমান করার জন্য যথেষ্ট যে প্রভূ খ্রীষ্টের শিষ্যরা তাঁকেই ঈশ্বর হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন৷

ওল্ড টেস্টামেন্টে প্রভূ যীশুকে যে অদ্বিতীয় উপাধি দেওয়া হয়েছে তা হল YHWH (ঈশ্বরের পোশাকি নাম)৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের উপাধি “ত্রানকর্তা” (স্লাম 130:7; হোসিয়া 13:14) নিই টেস্টামেন্টেও যীশুর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে (টাইটাস 2:13; রেভেলেশান 5:9)৷ ম্যাথিউ 1-এ যীশুকে বলা হয়েছে ইম্যানুয়েল - “ঈশ্বর আমাদের সহায়”৷ সেজারিয়া 12:10-এ তিনি অর্থাৎ YHWH বলেন যে “তারা আমাকে মানবে যাঁকে তারা ক্ষতবিক্ষত করেছে৷” কিন্তু নিউ টেস্টামেন্ট এই তত্ত্বকে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার জন্য প্রয়োগ করে (জন্ 19:37; রেভেলেশান 1:7)৷ যদি ইনি YHWH হন যিনি ক্ষতবিক্ষত এবং মান্য হয়েছেন, এবং যীশুর তিনি যিনি ক্ষতবিক্ষত এবং মান্য হয়েছেন, তবে যীশুই হলেন YHWH৷ ফিলিপিয়ান্‍স 2:10-11-তে পল্ ইশা 45:22-23 বলেছেন যা খ্রীষ্টের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে৷ আবার, ঈশ্বরের প্রার্থনার সময় ঈশ্বরের সাথে প্রভূ যীশুর নামও নেওয়া হয় “তোমাদের জন্য আশীর্ব্বাদ এবং শান্তি আমাদের পিতা অর্থাৎ ঈশ্বর এবং প্রভূ যীশুর পক্ষ থেকে” (গ্যালাটিয়ান্‍স 1:3; এফেসিয়ান্‍স 1:2)৷ যদি যীশু দেবতা না হন তবে ঈশ্বরের নিন্দা হবে৷ যীশু খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে যে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানেও ঈশ্বরের নামের সাথে প্রভূ যীশুর নাম উচ্চারিত হয়েছে “পিতা, এবং পুত্র, এবং পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্যে [একক]” (ম্যাথিউ 28:19; 2 কোরিন্থিয়ান্‍স 13:14-ও দেখুন)৷

যে কার্য শুধুমাত্র ঈশ্বরের দ্বারা সিদ্ধ হয় তার দায়িত্ব প্রভূ যীশুকে দেওয়া হয়েছে৷ প্রভূ যীশু শুধুমাত্র মৃত্যুকে জয় (জন্ 5:21, 11:38-44) এবং পাপ ক্ষমা (অ্যাক্টস্ 5:31, 13:38) করেননি, তিনি এই বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন এবং ধরে রেখেছেন (জন্ 1:2; কোলোসিয়ান্‍স 1:16-17)৷ এটা আরো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যখন কেউ ভাবে যে YHWH বলেছেন যে এই সৃষ্টিকার্যের সময় তিনি একা ছিলেন (ইশা 44:24)৷ আবার প্রভূ যে সকল গুণ আছে তা কেবল দেবতারই থাকতে পারে : অমরত্ব (জন্ 8:58), সর্বত্র বিরাজমানতা (ম্যাথিউ 18:20, 28:20), সর্বজ্ঞতা (ম্যাথিউ 16:21) এবং সর্বশক্তিমানতা (জন্ 11:38-44)৷

এখন ঈশ্বর হিসেবে নিজেকে দাবি করা বা কাউকে বোকা বানানো এক বিষয় আর এই ঘটনাকে প্রমান করা সম্পূর্ণ অন্য বিষয়৷ প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট আমাদের অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখিয়েছেন যা থেকে তাঁর দেবত্ব প্রমানিত হয়৷ যীশুর কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা হল, জলকে মদিরায় পরিনত করা (জন্ 2:7), জলের ওপর দিয়ে হাঁটা (ম্যাথিউ 14:25), শারিরীক বস্তুর একাধিককরণ (জন্ 6:11), অন্ধকে (জন্ 9:7), খোঁড়াকে (মার্ক 2:3), এবং অসুস্থকে (ম্যাথিউ 9:35; মার্ক 1:40-42) সুস্থ করা, এমনকি মানুষকে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে তোলা (জন্ 11:43-44; লিউক 7:11-15; মার্ক 5:35)৷ তাছাড়া প্রভূ যীশু নিজের মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছিলেন৷ প্যাগান পুরানেও মৃত এবং মৃত্যু থেকে উত্তরণ প্রাপ্ত ভগবানের কথা আছে, কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে যীশুর পুনরুত্থানের মত এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নেই এবং কোনো দাবিই ধর্ম-সম্মতভাবে দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি৷

যীশু সম্পর্কে অন্তত বারোটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে যা কিনা অ-খ্রীষ্টীয় সমালোচক পণ্ডিতগনও মেনে নেবেন :

1.যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছিলেন৷

2.তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল৷

3.তাঁর মৃত্যুতে শিষ্যরা হতাশ হয়েছিল৷

4.যীশুকে কবর দেওয়ার কিছুদিন পর তাঁর সেই কবর খালি অবস্থায় আবিষ্কৃত হয় (অথবা খালি অবস্থায় আবিষ্কার করার দাবি করা হয়)৷

5.শিষ্যরা বিশ্বাস করে যে তারা কবর থেকে প্রভূ যীশুর উঠে আসার ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করেছে৷

6.এই ঘটনার পর শিষ্যরা সন্দেহপরায়ণ থেকে কঠোর বিশ্বাসীতে পরিবর্তিত হয়েছে৷

7.পূর্ববর্তী সময়ে গীর্জায় এই বার্তাটিই ছিল ধর্মোপদেশের মূল কথা৷

8.জেরুজালেমে এই বার্তাই ছিল ধর্মোপদেশ৷

9.এই ধর্মোপদেশের ফলে গীর্জার উৎপত্তি হয় এবং তা বৃদ্ধি পায়৷

10.পুনরুত্থানের দিন রবিবার, (শনিবার) সব্বাথকে পরিবর্তিত করে প্রার্থনা বা অর্চনার দিন হয়ে ওঠে৷

11.জেম্‍স একজন নাস্তিক, খ্রীষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় যখন সেও বিশ্বাস করে যে সে পুনরুত্থিত যীশুকে দেখেছে৷

12.পল্, খ্রীষ্টান ধর্মের শত্রু, ধর্মান্তরিত হয় যখন সে যীশুর পুনরুত্থিত হওয়ার ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করে

এমনকি কেউ যদি এই নির্দিষ্ট তালিকা লক্ষ্য করতে চায়, তবে গস্‍পেল্‍কে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং প্রভূ যীশুর পুনরুত্থানকে প্রমান করতে কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট : প্রভূর মৃত্যু, তাঁকে কবর দেওয়া, তাঁর পুনরুত্থান এবং আবির্ভাব (1 কোরিন্থিয়ান্‍স 15:1-5)৷ হয়ত কিছু তত্ত্ব আছে যা ওপরের ঘটনাগুলিকে বর্ণনা করতে পারে, তবে শুধুমাত্র পুনরুত্থানের ঘটনাই সব কিছুকে নস্যাৎ করে দিতে পারে৷ সমালোচকেরা মেনে নিয়েছেন যে শিষ্যরা পুনরুত্থিত যীশুকে দেখার দাবি করেছেন৷ যেভাবে পুনরুত্থান ঘটেছে তা মানুষকে পরিবর্তিত করেছে তাই এই দাবি মিথ্যাও নয় বা দৃষ্টিভ্রমও নয়৷ প্রথমত, তারা এর ফলে কি অর্জন করতে পারত? খ্রীষ্টান ধর্ম জনপ্রিয় ছিল না তাই তারা অবশ্যই এই কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারত না৷ দ্বিতীয়ত, মিথ্যেবাদীরা ভালো শহীদ হওয়ারও যোগ্য নয়৷ তাই শিষ্যদের জন্য এই পুনরুত্থানের ঘটনা বর্ণনা করার একমাত্র কারন ছিল বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করা৷ হ্যাঁ, বহু মানুষ এমন মিত্যের জন্য প্রান দেয় যা তারা সত্যি বলে মনে করে, কিন্তু যা তারা মিথ্যে হিসেবে জানে তার জন্য প্রান দেয় না৷

শেষে বলা যায়, যীশু দাবি করেছেন তিনিই YHWH, যে তিনিই দেবতা (শুধুমাত্র “ঈশ্বর” নন, আসল ঈশ্বর); তাঁর অনুগামীরা (জিউস যে কিনা মূর্তিপূজার ঘোরতর বিরোধী) তাঁকে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বর হিসেবে নির্দেশ করে৷ পুনরুত্থানের মত অলৌকিক এবং পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার মত ঘটনার মাধ্যমে যীশু নিজের দেবত্ব প্রমান করেছেন৷ অন্য কোনো বিষয়ই এই ঘটনাকে বর্ণনা করতে পারে না৷ হ্যাঁ, প্রভূ যীশুর দেবত্ব বাইবেল সমর্থিত৷

মুক্তি কি শুধুমাত্র বিশ্বাস, নাকি বিশ্বাস এবং কর্ম?



প্রশ্ন: মুক্তি কি শুধুমাত্র বিশ্বাস, নাকি বিশ্বাস এবং কর্ম?

উত্তর:
সমস্ত খ্রীষ্টান মতবাদের মধ্যে এটি হয়ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ এই প্রশ্নটি হল পুনর্গঠনের কারণ, প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ এবং ক্যাথলিক চার্চের বিভক্ত হবার কারণ৷ এই প্রশ্নটিই হল বাইবেল সমর্থিত খ্রীষ্টানত্ব এবং বেশীরভাগ “খ্রীষ্টান” ধর্মবিশ্বাসের মূল পার্থক্য৷ মুক্তি কি শুধুমাত্র বিশ্বাস, নাকি বিশ্বাস এবং কর্ম? আমি কি শুধুমাত্র প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাস রাখলেই রক্ষা পাব, নাকি আমাকে তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং আরও কিছু আবশ্যিক কাজ করতে হবে?

বাইবেলের কিছু অধ্যায়ের জন্য শুধুমাত্র বিশ্বাস নাকি বিশ্বাস ও কর্ম এই প্রশ্নটিতে সামঞ্জস্যবিধান কঠিন হয়ে পড়েছে৷ জেম্‍‍স 2:24 এর সাথে রোমানস 3:28 এবং গ্যালাটিয়ান্‍স 3:24 এর তুলনা কর৷ কেউ কেউ মনে করেন যে পল (শুধুমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তিলাভ) এবং জেম্‍স (বিশ্বাস এবং কর্মের মাধ্যমে মুক্তিলাভ)এর তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে৷ পলের ধর্মমত অনুযায়ী ন্যায়বিচার শুধুমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমে (এফেসিয়ান্‍স 2:8-9), যেখানে জেম্‍স বলেছেন যে তা লাভ করা যাবে বিশ্বাস এবং কর্মের মাধ্যমে! জেম্‍স ঠিক যা বলেছেন তা পরীক্ষা করলে এই সমস্যার সমাধান লাভ করা যেতে পারে৷ জেম্‍স এই বিশ্বাসের খণ্ডন করেছেন যে একজন ব্যক্তি কোনো ভাল কাজ না করে বিশ্বাস রাখতে পারে (জেম্‍স 2:17-18)৷ জেম্‍স আরো দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে প্রভূ খ্রীষ্টের প্রতি আসল বিশ্বাস থেকেই মানুষ পায় পরিবর্তিত জীবন এবং ভালো কর্ম (জেম্‍স 2:20-26)৷ জেম্‍স এ কথা বলছেন না যে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে বিশ্বাস এবং কর্মের মাধ্যমে, কিন্তু যে ব্যক্তি সত্যিকারের বিশ্বাসের দ্বারা ন্যায় লাভ করে সে তার জীবনে অবশ্যই ভালো কর্ম করবে৷ যদি একজন ব্যক্তি নিজেকে আস্তিক হিসেবে দাবি করে, কিন্তু তার জীবনে কোনো ভাল কর্ম না করে, তবে তার অবশ্যই প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের প্রতি আসল বিশ্বাস নেই (জেম্‍স 2:14, 17, 20, 26)৷

পলও তার লেখাতে একই কথা বলেছেন৷ গ্যালাটিয়ান্‍স 5:22-23 এ তারা তালিকাভুক্ত রয়েছে যারা ভালো ফলে বিশ্বাসী৷ আমরা কর্মের দ্বারা নয়, শুধুমাত্র বিশ্বাসের দ্বারা মুক্তি পাব একথা বলার ঠিক পরেই পল আমাদের জানান যে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে ভালো কর্ম করার জন্য (এফেসিয়ান্‍স 2:10)৷ পলও ঠিক সেরকম পরিবর্তিত জীবন আশা করেছেন যেরকম করেছেন জেম্‍স : “তাই, যদি কেউ প্রভূ খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়, সে হবে নতুন সৃষ্টি; পুরনো চলে গেছে, নতুন এসেছে” (2 কোরিন্থিয়ান্‍স 5:17)৷ জেম্‍স এবং পল তাদের মুক্তির বিষয়ে শিক্ষার পদ্ধতিতে দ্বিমত প্রকাশ করেননি৷ তারা একই বিষয়ে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্দেশ দিয়েছে৷ পল জোর দিয়েছে যে ন্যায়বিচার আসবে শুধুমাত্র বিশ্বাস থেকে যেখানে জেম্‍স জোর দিয়েছে যে প্রভূ খ্রীষ্টের ওপর আসল বিশ্বাস থেকেই ভালো কাজ উৎপন্ন হয়৷

কে এই পবিত্র আত্মা?



প্রশ্ন: কে এই পবিত্র আত্মা?

উত্তর:
পবিত্র আত্মার রূপ বিষয়ে প্রচুর ভুল ধারণা আছে৷ কেউ মনে করে পবিত্র আত্মা হলেন একটি অলৌকিক শক্তি৷ অন্যরা ভাবেন পবিত্র আত্মা এমন এক নৈর্ব্যক্তিক শক্তি যাকে ঈশ্বর খ্রীষ্টের শিষ্যদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন৷ পবিত্র আত্মার রূপ সম্পর্কে বাইবেলে কি বলা আছে? খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, বাইবেল ঘোষণা করেছে যে পবিত্র আত্মা হল ঈশ্বর৷ বাইবেলে আরো বলা আছে যে এই পবিত্র আত্মা হল একজন পবিত্র ব্যক্তি; মন, আবেগ এবং ইচ্ছে সহ একজন মানুষ৷

অ্যাক্টস্ 5:3-4 সব বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টরূপে দেখা যায় যে এই পবিত্র আত্মাই হলেন ঈশ্বর৷ এই পংক্তিতে পিটার অ্যানানিয়াসের সাথে দ্বন্দ্বে বলেছে যে সে কেন পবিত্র আত্মাকে মিথ্যে বলেছে এবং এও বলেছে যে সে “মানুষকে মিথ্যে বলেনি, বরং ইশ্বরকে বলেছে৷” এটি একটি স্পষ্ট ঘোষণা যে পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্যে মিথ্যে বলার অর্থ হল ঈশ্বরকে মিথ্যে বলা৷ আমরা আরো জানতে পারি যে পবিত্র আত্মাই ঈশ্বর কারন তিনি ঈশ্বরের সকল গুণ অর্জন করেন৷ উদাহরণস্বরূপ, স্লাম 139:7-8 এ তাঁর সর্বত্র বিরাজমানতা দেখা যায়, “তোমার আত্মা ছেড়ে আমি কোথায় যেতে পারি? তোমার উপস্থিতি ছেড়ে আমি কোথায় পালাতে পারি? আমি যদি স্বর্গেও চলে যাই, তবে সেখানেও তুমি আছ; আমি যদি গভীরে আমার শয্যা রচনা করি, তুমি সেখানে আছ৷” আবার 1 কোরিন্থিয়ান্‍স 2:10-11 তে, পবিত্র আত্মার মধ্যে সর্বজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই৷ “কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছে আত্মার মাধ্যমে এগুলিকে প্রকাশ করেছেন৷ আত্মাই সমস্ত কিছুর সন্ধান করে, এমনকি ঈশ্বরের গভীরের জিনিসও৷ মানুষের মধ্যে যে জানে মানুষের চিন্তাভাবনা এবং যে বিশ্বাস করে তাঁর মধ্যেই মানুষের অস্তিত্ব? একইভাবে কেউই ঈশ্বরের আত্মা থেকে আলাদা করে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে জানতে পারে না৷”

আমরা বুঝতে পারি যে পবিত্র আত্মা অবশ্যই একজন পবিত্র ব্যক্তি কারণ তাঁর আছে মন, আবেগ এবং ইচ্ছে৷ পবিত্র আত্মা ভাবতে এবং জানতে পারেন (1 কোরিন্থিয়ান্‍স 2:10)৷ পবিত্র আত্মা দুঃখ পেতে পারেন (এফেন্‍সিয়ান্‍স 4:30)৷ পবিত্র আত্মা আমাদের জন্য মধ্যস্থতা করেন (রোমান্‍স 8:26-27)৷ তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন (1 কোরিন্থিয়ান্‍স 12:7-11)৷ পবিত্র আত্মাই হলেন ঈশ্বর, তিনিই হলেন ত্রয়ী শক্তির তৃতীয় ব্যক্তি৷ ঈশ্বর হিসেবে, এই পবিত্র আত্মা আমাদের সান্ত্বনাদাতা এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতে পারেন যেরকম প্রভূ যীশু নিজে হবেন বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন (জন্ 14:16, 26, 15:26)৷

ঈশ্বর কি আসল? আমি কিভাবে নিশ্চিতরূপে জানতে পারবো যে ঈশ্বর?



প্রশ্ন: ঈশ্বর কি আসল? আমি কিভাবে নিশ্চিতরূপে জানতে পারবো যে ঈশ্বর?

উত্তর:
আমরা জানি যে ঈশ্বর আসল কারন তিনি তিনি প্রক্রিয়ায় আমাদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করেছেন : তাঁর সৃষ্টি, তাঁর বাণী, এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ের মাধ্যমে।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের সবচেয়ে মৌলিক প্রমান হল তাঁর সৃষ্ি। “পৃথিবী সৃষ্ির শুরু থেকেই ঈশ্বরের অদৃশ্য গুণগুলি হল – তাঁর শাশ্বত শক্তি এবং পবিত্র সদ‍গুণ – যা কিনা মানুষ কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই স্পষ্ভাবে উপলব্ধি করতে পারে তাঁর সৃষ্ি থেকে” (রোমান্‍স 1:20)। “স্বর্গ ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করে; আর আকাশ হল ঈশ্বরের নিজের হাতের সৃষ্ি।” (স্লাম 19:1)।

আমি যদি কোনো মাঠের মধ্যে একটি হাত ঘড়ি খুঁজে পাই, আমি নিশ্চই ভেবে নেব না যে এটি কারোর উপস্থিতি ছাড়া অথবা আগে থেকেই সেখানে “উপস্থিত” ছিল। ঘড়ির ডিজাইন দেখে আমার ধারণা হবে যে এটির অবশ্যই একজন কারিগর আছেন। কিন্তু তার থেকেও অনেক ভাল এবং যথাযথ সৃষ্টি আমাদের চারপাশে রয়েছে। সময়ের পরিমাপ হাতঘড়ির ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে ঈশ্বরের হাতের কাজের ওপর – পৃথিবীর নিয়মিত ঘুর্ণন (এবং সেজিয়াম-133 অনুর তেজস্ক্রিয় উপাদান)। এই বিশ্ব হল একটি মহত্ সৃষ্টি এবং এর থেকে আমরা জানতে পারি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্তার কথা।

আমি যদি কোনো সাংকেতিক বার্তা পাই, তবে আমি সেই সংকেত জানার জন্য সাংকেতিক ভাষা পাঠোদ্ধারে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য চাইব। আমার ধারণা হবে যে যিনি এই বার্তা সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি একজন বুদ্ধিমান প্রেরক। আমরা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে যে ডিএনএ বহন করি তার “সংকেত” কত জটিল? ডিএনএ-র এই জটিলতা কি আমাদের সেই সংকেত সৃষ্টিকর্তার কথা ভাবতে বাধ্য করে না?

ঈশ্বর শুধুমাত্র জটিল এবং সুক্ষভাবে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেননি; তিনি প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ে ধীরে ধীরে শাশ্বত চেতনা প্রবেশ করিয়েছেন (এক্‍লেসিয়েসটেস 3:11)। মানবজাতির একটি সহজাত ধারণা হল যে আমরা যা দেখতে পাই তার থেকেও জীবন অনেক বড়, যে পার্থিব কাজকর্মের রথেকেও বৃহত্ এক অস্তিত্ব রয়েছে৷ আমাদের শাশ্বত চেতনা অন্তত দুটি প্রক্রিয়ায় নিজের অস্তিত্বের কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে : আইন-প্রণয়ন এবং ধর্মানুষ্ঠান৷

ইতিহাসের প্রতিটি সভ্যতাই কিছু নৈতিক আইনকে গুরুত্ব দিয়েছে, যা কিনা একটি সভ্যতা থেকে আর একটি সভ্যতায় আশ্চর্যজনকভাবে এক৷ উদাহরণস্বরূপ, প্রেম বিশ্বজনীনভাবে মূল্যবান, যেখানে মিথ্যে কথা বলা বিশ্বজনীন অপরাধ৷ এই সাধারণ নৈতিকতা – সঠিক এবং ভুলের এই বিশ্বজনীন জ্ঞান – নির্দেশ করে যে এমন একজন সর্বোচ্চ শক্তিমান আছেন যিনি আমাদের এই দ্বন্দ্ব দিয়েছেন৷

একইভাবে, সমস্ত পৃথিবীর মানুষ, যে কোনো সংস্কৃতিতে, সর্বদা পূজা বা অর্চনার প্রথাতে মনোনিবেশ করেছে। অর্চনার উদ্দেশ্য হয়ত আলাদা, কিন্তু “সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি”র ধারণা মানব সমাজের একটি অনস্বীকার্য অংশ। আমাদের অর্চনার উন্নতি সেই ঘটনার সাথে যুক্ত যে ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন “তাঁর নিজের প্রতিচ্ছবিরূপে” (জেনেসিস্ 1:27)।

ইশ্বর নিজেকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন তাঁর নিজস্ব বাণীর দ্বারা, বাইবেল। এই ধর্মগ্রন্থটির পুরোটাতেই, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া হয়েছে একটি স্বপ্রমানিত ঘটনা হিসেবে (জেনেসিস্ 1:1, এক্সোডাস 3:14)। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন যখন নিজের জীবনী লিখলেন, তিনি নিজের অস্তিত্ব প্রমানের চেষ্টা করে সময় নষ্ট করেননি। তেমনই, ঈশ্বরও তাঁর গ্রন্থে নিজের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য বেশী সময় ব্যয় করেননি। বাইবেলের জগত্-পরিবর্তনকারী বৈশিষ্ট্য হল, এর একতা, এবং সেইসব অলৌকিক ঘটনা যা কিনা প্রমান করে ঈশ্বরকে কাছ থেকে জানার জন্য এই গ্রন্থের লেখা বিষয়ই যথেষ্ট।

যে তৃতীয় পন্থায় ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করেছেন তা হল, তাঁর পুত্র, প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট (জন 14:6-11)। “একেবারে শুরুতে ছিল শব্দ, এবং বাণী ছিল ঈশ্বরের সাথে, এবং বাণীই ছিল ঈশ্বর। বাণী পরিণত হল জৈবদেহতে এবং তিনি বাস করলেন আমাদের মধ্যে। আমরা তাঁর মহিমা প্রত্যক্ষ করেছি, সেই এক এবং অনন্যের মহিমা, যিনি পিতার থেকে এসেছিলেন, সম্পূর্ণ আশীর্ব্বাদ এবং সত্যের সাথে” (কোলোসিয়ান্‍স 2:9)।

প্রভূ যীশু তাঁর এই অদ্ভুত জীবনে, স্বার্থকভাবে সমগ্র ওল্ড টেস্টামেন্টের আইন রক্ষা করেছেন এবং মশিহার ভবিষ্যদ্বাণী পালন করেছেন (ম্যাথিউ 5:17)। তিনি করুণার অসংখ্য নমুনা সম্পন্ন করেছেন এবং সাধারণ অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন নিজের বার্তাকে এবং দেবত্বকে প্রমান করতে (জন্ 21:24-25)। তখন, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিনদিন পরে, তিনি মৃত্যু থেকে জেগে ওঠেন, যে ঘটনাটি কয়েক শত মানুষ নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছে (1 কোরিন্থিয়ান্‍স 15:6)। এই ঐতিহাসিক ঘটনা “প্রমান”এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট কে। অ্যাপোষ্টল পল যেরকম বলেছেন, এই জিনিসগুলি “কোনো ঘটনাই আড়ালে ঘটোনো হয়নি” (অ্যাক্টস্ 26:26)।

আমরা বিশ্বাস করি যে সর্বদাই এমন কিছু নাস্তিক মানুষ থাকবেন যাদের ঈশ্বর সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা আছে এবং তাই প্রমানগুলিও তারা সেভাবেই পড়ে থাকেন। এবং এমন কিছু মানুষ থাকবে যাদের কোনো প্রমানই বিশ্বাস করাতে পারবে না (স্লাম 14:1)। সম্পূর্ণটাই আসে বিশ্বাস থেকে (হিব্রু 11:6)।

আমার জীবনের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা আমি কিভাবে জানতে পারব? ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার বিষয়ে বাইবেলে কি বলা আছে?



প্রশ্ন: আমার জীবনের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা আমি কিভাবে জানতে পারব? ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার বিষয়ে বাইবেলে কি বলা আছে?

উত্তর:
যেকোনো পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার জন্য দুটি পথ আছে : 1) তুমি কি চাইছ তা নিশ্চিত কর অথবা এমন কিছু কোরো না যা বাইবেলে নিষেধ করা আছে৷ 2) তুমি কি চাইছ তা নিশ্চিত কর অথবা যা করছ তা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করবে এবং তোমাকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হতে সাহায্য করবে৷ যদি এই দুটি জিনিস সত্যি হয় এবং তা সত্ত্বেও তুমি যা চাইছ তা ভগবান তোমাকে দিচ্ছেন না, তবে তা তোমাকে দেওয়া নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়৷ অথবা, তোমাকে হয়ত আরো একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে৷ কখনো কখনো ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারা কঠিন হয়ে যায়৷ মানুষরা চায় যাতে ঈশ্বর তাদের বলে দেন যে তাদের করণীয় কি – কোথায় কাজ করতে হবে, কোথায় থাকতে হবে, কাকে বিয়ে করতে হবে, ইত্যাদি৷ ঈশ্বর খুব কমই মানুষদের সরাসরি এবং নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে থাকেন৷ ঈশ্বর আমাদের সুযোগ দেন এই সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে৷

রোমান্‍স 12:2 আমাদের বলে যে, “এই পৃথিবীর আদর্শ অনুযায়ী কোনো আকাঙ্ক্ষাকে মেনে নেবে না, বরং মনের পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হবে৷ তখন তুমি বুঝতে এবং মান্য করতে পারবে যে ঈশ্বরের ইচ্ছা কি – তাঁর মহান, আনন্দদায়ক এবং সঠিক ইচ্ছা৷” যে সিদ্ধান্ত ঈশ্বর আমাদের নিতে দিতে চান না তা হল, পাপ করা বা তাঁর ইচ্ছার বিরোধীতা করার সিদ্ধান্ত৷ ঈশ্বর আমাদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন শুধু সেই বিষয়েই আমাদের পছন্দ করার সুযোগ দিতে চান৷ তাই, তুমি কিভাবে বুঝবে যে ঈশ্বরের তোমার জন্য কি ইচ্ছা? যদি তুমি প্রভূর কাছে যাওয়ার চেষ্টা কর এবং সত্যিই তাঁর ইচ্ছা বুঝতে চাও, তবে ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা তোমার হৃদয়ে প্রেরণ করবেন৷ আসল পথ হল ঈশ্বরের ইচ্ছায় চলা, নিজের ইচ্ছায় নয়৷ “ঈশ্বরের করুণায় নিজেকে আলোকিত কর এবং তিনি তোমাকে তোমার হৃদয়ের ইচ্ছাপূরণের পথ দেখাবেন” (স্লাম্ 37:4)৷ বাইবেল যদি এর বিরোধীতা না করে এবং এটি যদি আধ্যাত্মিকভাবে তোমার উপকার করে, তবে বাইবেল তোমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং নিজের মনের কথা শোনার “অনুমতি” দেয়৷ তুমি যদি সত্যি বিনয়ের সাথে এবং খোলা মনে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চাও, তবে তিনি নিজের ইচ্ছা তোমার কাছে প্রকাশ করবেন৷

জীবনের অর্থ কি?



প্রশ্ন: জীবনের অর্থ কি?

উত্তর:
জীবনের অর্থ কি? আমি কিভাবে জীবনের উদ্দেশ্য, পূর্ণতা এবং সন্তোষ খুঁজে পাব? স্থায়ী কিছু অর্জন করার ক্ষমতা কি আমার আছে? বহু মানুষ কখনোই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে না৷ তারা বহু বছর পিছনের দিকে তাকায় এবং ভাবে কেন তাদের সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে গেছে এবং কেন তারা এত একাকীত্ব অনুভব করে, যদিও তারা হয়ত যা অর্জন করতে চেয়েছে তা সবই পেয়েছে৷ একজন বেসবস খেলোয়াড় খ্যাতির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে বলেছিলেন, যখন তিনি প্রথম খেলা শুরু করেছিলেন তখন তিনি অন্য কারো কাছ থেকে কি শুনতে চেয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, “আমি চাইতাম যে কেউ আমাকে প্রশ্ন করুক যে আমি কবে শীর্ষে পৌঁছাব, তবে সেরকম কিছুই হয়নি৷” অনেক বছর নষ্ট করার পরও বহু লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে গেছে৷

আমাদের মানবসমাজে মানুষ বহু উদ্দেশ্য অনুসরণ করে, এটা ভেবে যে সেই পথেই তারা জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে৷ এর মধ্যে কেউ অনুসরণ করে ব্যবসায়িক সাফল্য, কেউ সম্পদ, কেউ ভালো সম্পর্ক, কেউ কাম, কেউ বিনোদন আবার কেউ অন্যের ভালো করতে চায়৷ মানুষ পরীক্ষা করে দেখেছে যে সম্পদ, সম্পর্ক এবং আনন্দের লক্ষ্য অর্জন করার পরও মনের ভেতরে কোথাও একটা গভীর শূন্যতা থাকে, এমন এক শূন্যতা যাতে মনে হয় জীবনের কোনো লক্ষ্যই পূরণ হয়নি৷

এক্লেসিয়েট্‍সের বাইবেল সংক্রান্ত গ্রন্থের লেখক এই অনুভূতিকে ব্যাখ্যা করেছেন যখন তিনি বলেছেন, “অর্থহীন! অর্থহীন!... সবকিছুই অর্থহীন” (এক্লেসিয়েট্‍স 1:2)৷ রাজা সলোমন এক্লেসিয়েট্‍সের লেখক, তাঁর প্রচুর সম্পত্তি ছিল, জ্ঞান ছিল যে কোনো যুগের কারো চেয়ে বেশী, কয়েক শত সুন্দরী নারী, সুন্দর স্থান এবং উদ্যান ছিল রাজ্যের গৌরবের বিষয়, সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য এবং মদিরা, এবং সমস্ত রকমের বিনোদন উপস্থিত ছিল৷ এবং একটা সময় তিনি বলেছিলেন যে তাঁর মন যা চাই তিনি তাই করেন৷ তা সত্ত্বেও তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, “সূর্যের নীচে এই পৃথিবী” – জীবন অতিবাহিত করা এবং আমরা চোখ দিয়ে যা দেখতে পাই এবং ইন্দ্রিয় দিয়ে যা অনুভব করতে পারি – তা সবই অর্থহীন! কেন এই শূন্যতা? কারন আমরা এই লৌকিক সমাজে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করি তার থেকেও উচ্চমানের জীবন ধারণের জন্য ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন৷ সলোমন ঈশ্বর সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি সকল মানুষের হৃদয়েই শাশ্বতভাব দিয়েছেন....” (এক্লেসিয়েট্‍স 3:11)৷ তাই আমরা প্রত্যেকে মন থেকে জানি যে “লৌকিক সমাজ”ই সব নয় যা হওয়া উচিৎ৷

বাইবেলের প্রথম গ্রন্থ জেনেসিসে আমরা দেখতে পাই যে, ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিজের প্রতিচ্ছবিরূপে (জেনেসিস্ 1:26)৷ এর অর্থ হল যে, আমরা যে কোনো কিছুর থেকে অনেক বেশি ঈশ্বরের অনুরূপ (যে কোনো জীবন্ত প্রানীর চেয়ে)৷ আমরা আরো দেখতে পাই যে মানবসভ্যতা পাপে ডোবার আগে এবং পাপের অভিশাপ পৃথিবীতে নেমে আসার আগে, কিছু জিনিস সত্য ছিল : (1) ঈশ্বর মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন (জেনেসিস্ 2:18-25); (2) ঈশ্বরই মানুষকে কাজ দিয়েছিলেন (জেনেসিস্ 2:15); ঈশ্বরের সাথে মানুষের বন্ধুত্বভাব ছিল (জেনেসিস্ 3:8); এবং (4) ঈশ্বরই মানুষকে পৃথিবীর মালিকানা দিয়েছিলেন (জেনেসিস্ 1:26)৷ এই সকল বিষয়ের গুরুত্ব কি? ঈশ্বর আমাদের এসব দিয়েছিলেন জীবনের পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য৷ কিন্তু সবগুলিই (বিশেষকরে ঈশ্বরের সাথে মানুষের বন্ধুত্বভাব) খুব খারাপভাবে প্রভাবিত হয় কারন মানুষ পাপে পতিত হয় এবং ফলে পৃথিবীতে নেমে আসে অভিশাপ (জেনেসিস্ 3)৷

বাইবেলের শেষ গ্রন্থ রেভেলেশান্-এ ঈশ্বর জানিয়েছেন যে আমরা তিনি এই বর্তমান পৃথিবী এবং স্বর্গকে ধ্বংস করবেন যেভাবে আমরা এই দু’টিকে দেখি এবং শাশ্বত অবস্থানে অগ্রদূত হিসেবে নতুন পৃথিবী এবং স্বর্গ সৃষ্টি করবেন৷ সেই সময় তিনি উদ্ধার পাওয়া মানব সভ্যতার সাথে নিজের বন্ধুত্বের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন, যখন উদ্ধার না পাওয়া মানুষেরা বিচারাধীন থাকবে এবং আগুনের জ্বলাশয়ে নিক্ষিপ্ত হবে (রেভেলেশান্ 20:11-15)৷ পাপের অভিশাপ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আর কোনো পাপ, দুঃখ, অসুস্থতা, মৃত্যু, ব্যথা ইত্যাদি কিছুই থাকবে না (রেভেলেশান্ 21:4), এবং বিশ্বাসীরা সকল ভালো বিষয়ের উত্তরাধিকারী হবে৷ ঈশ্বর তাদের সাথে বাস করবেন এবং তারা হবে ঈশ্বরের পুত্র (রেভেলেশান্ 21:7)৷ এই অনুযায়ী, আমরা সেই সম্পূর্ণ বৃত্তে আসি যে ঈশ্বর তাঁর সাথে বন্ধুত্বভাব স্থাপনের জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন, মানুষ পাপ করেছে, সেই সম্পর্ক ভেঙেছে, তাই যারা বিচারের পরে মুক্তি পেয়েছে ঈশ্বর তাদের সঙ্গে শাশ্বত বন্ধুত্বের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছেন৷ এখন জীবন কাটাতে গিয়ে কিছু জিনিস অর্জন করতে হচ্ছে মৃত্যুর জন্য তবে ঈশ্বরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অমরত্ব পাওয়া ব্যর্থতার থেকেও খারাপ! কিন্তু ঈশ্বর একটি পথ দেখিয়েছেন যার মাধ্যমে শুধুমাত্র শাশ্বত করুণা লাভই সম্ভব হবে না (লিউক 23:43), এই পৃথিবীতে অতিবাহিত জীবন হয়ে উঠবে সন্তোষজনক এবং অর্থবহ৷ কিভাবে এই শাশ্বত করুণা এবং “পৃথিবীতে স্বর্গ” একই সাথে অর্জন করা সম্ভব?

প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে জীবনের অর্থ পুনঃস্থাপন করা

বর্তমান এবং শাশ্বত ভবিষ্যৎ উভয়ের ক্ষেত্রে জীবনের সঠিক অর্থ খুঁজে পাওয়া সম্ভব ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে, যা কিনা আদম এবং ইভের পাপের ফলে একসময় হারিয়ে গেছে৷ বর্তমানে শুধুমাত্র ঈশ্বরের পুত্র প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই সেই সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব (অ্যাক্টস্ 4:12; জন্ 14:6; জন্ 1:12)৷ কেউ যখন নিজের পাপের অনুশোচনা করবে তখনই সে পাবে শাশ্বত জীবন (আর সেই পাপ কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে চায় যে প্রভূ যীশু তাদের পরিবর্তন ঘটিয়ে এক নতুন জীবন দান করুন) এবং মুক্তিদাতা হিসেবে প্রভূ যীশুর ওপর আস্থা রাখতে শুরু করে (এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আরো তথ্য জানতে “মুক্তির পথ বা উপায় কি?” এই প্রশ্নটি দেখ)৷

প্রভূ যীশুকে মুক্তিদাতা হিসেবে খুঁজে পেলে আমরা জীবনের সঠিক অর্থও খুঁজে পাব (এটি তার মতই চমৎকার)৷ বরং, জীবনের সঠিক অর্থ হল যীশুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁকে অনুসরণ করা, তাঁর বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা, ঈশ্বরের বাণী অর্থাৎ বাইবেলের মাধ্যমে তাঁর সাথে সময় কাটানো, তাঁর সাথে প্রার্থনায় যোগ দেওয়া, এবং তাঁর নির্দেশ মান্য করে তাঁর সাথে পথ চলা৷ যদি তুমি একজন অবিশ্বাসী হও (অথবা একজন নতুন বিশ্বাসী) তবে তুমি হয়ত নিজেকে বলবে, “এই বাণী আমার কাছে খুব আনন্দদায়ক বা পূর্ণ মনে হচ্ছে না!” কিন্তু দয়া করে আরেকটু বেশি সময় ধরে পড়৷ যীশু নিম্নলিখিত মন্তব্যগুলি করেছেন :

“তোমরা সকলে যারা ক্লান্ত এবং যাদের ওপর বোঝা রয়েছে, তারা আমার কাছে এস, আমিই তোমাদের শান্তি দেব৷ আমার বোঝা নিজের কাধে নাও এবং আমার থেকে শেখ, কারন আমি মন থেকে কোমল এবং বিনয়ী, এবং তুমি এর ফলে তুমি নিজের আত্মার জন্য শান্তি খুঁজে পাবে, কারন আমার বোঝা হাল্কা এবং বহন করা সহজ” (ম্যাথিউ 11:28-30)৷ “আমি এসেছি যাতে তারা সম্পূর্ণভাবে জীবন লাভ করতে পারে” (জন্ 10:10b)৷ “যদি কেউ আমাকে অনুসরণ করতে চায়, সে নিশ্চই নিজেকে অস্বীকার করে নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমাকে অনুসরণ করবে৷ যারা নিজেদের জীবন নিজেরা রক্ষা করতে চাইবে তারা পারবে না, কিন্তু যারা আমার জন্য জীবন উৎসর্গ করবে তারাই সঠিক জীবন লাভ করবে” (ম্যাথিউ 16:24-25)৷ “প্রভূর নামে নিজেকে আলোকিত কর এবং তিনিই তোমার হৃদয়ের ইচ্ছা পূরণ করবেন” (স্লাম 37:4)৷

এই সমস্ত ছন্দোময় কবিতাতে যা বলা হয়েছে তা হল, আমাদের কাছে পছন্দ করার পথ রয়েছে৷ আমরা নিজেরাই নিজেদের জীবনের পথ খুঁজতে পারি, যার ফলে জীবন শূন্য থাকবে, অথবা সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে আমরা আমাদের জীবনের জন্য ঈশ্বর এবং তাঁর ইচ্ছাকে বেছে নিতে পারি, যার ফলে আমরা পূর্ণ অর্থে জীবন কাটাতে পারব, আমাদের হৃদয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে পারব এবং পাব তৃপ্তি ও সন্তোষ৷ এর কারন আমাদের স্রষ্টা আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের ভালো চান (হয়ত সবচেয়ে সহজ জীবন নয়, কিন্তু পূর্ণ জীবন)৷

যদি তুমি খেলার ভক্ত হও এবং কোনো পেশাদারী খেলায় যেতে চাও, তবে তুমি কিছু অর্থ খরচ করে স্টেডিয়ামের শীর্ষ সারিতে “নাসা-ভঙ্গ” আসনটি পেতে পার অথবা আরো কিছু অর্থ খরচ করে খুব কাছ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে তা দেখতে পার৷ এরকমই হল খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনকারীর জীবন৷ ঈশ্বরের সরাসরি দর্শন পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় যারা শুধু রবিবারে গীর্জায় যায়৷ কারন তারা মূল্য দেয়নি৷ ঈশ্বরের সরাসরি দর্শন তারা পাবে যারা সমস্ত মন থেকে খ্রীষ্টের শিষ্য এবং যারা নিজেদের ইচ্ছায় চলা বন্ধ করেছে যাতে ঈশ্বরের ইচ্ছায় চলতে পারে৷ তারা মূল্য দিয়েছে (প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট এবং তাঁর ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পন); তারাই জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করছে; তারা নিজেদের, তাদের বন্ধুদের এবং স্রষ্টার সম্মুখীন হতে পারে কোনোরকম অনুশোচনা ছাড়াই! তুমি কি মূল্য দিয়েছ? দিতে চাও কি? যদি চাও তবে তোমাকে আর জীবনের অর্থ বা উদ্দেশ্য খুঁজতে হবে না৷

আমি আমার খ্রীষ্ট জীবনে কিভাবে পাপকে অতিক্রম করতে পারবো?



প্রশ্ন: আমি আমার খ্রীষ্ট জীবনে কিভাবে পাপকে অতিক্রম করতে পারবো?

উত্তর:
বাইবেল অনেকগুলি বিভিন্ন পন্থা দেখিয়েছে আমাদের পাপকে অতিক্রম করতে সাহায্য করার জন্য৷ এই সম্পূর্ণ জীবনে, আমরা কখনোই সঠিকভাবে পাপের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারি না (1 জন্ 1:8), কিন্তু সেটাই সবসময়ে আমাদের উদ্দেশ্য থাকে৷ ঈশ্বরের সাহায্যের দ্বারা, এবং তাঁর বাণী মাধ্যমে বলা নীতিগুলিকে অনুসরণ করে, আমরা ধীরে ধীরে পাপকে অতিক্রম করতে পারি এবং অনেকটা প্রভূ যীশু খ্রীষ্টের মত হয়ে উঠতে পারি৷

বাইবেলে প্রথম যে পথের কথা বলা হয়েছে আমাদের পাপকে অতিক্রম করার জন্য তা হল পবিত্র আত্মা৷ ঈশ্বর আমাদের কাছে এই পবিত্র আত্মাকে পাঠিয়েছেন যাতে আমরা খ্রীষ্টের পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন যাপন করে জয়লাভ করতে পারি৷ গ্যালাটিয়ান্‍স 5:16-25-এ ঈশ্বর মানবদেহের বীজের সাথে আত্মার ফলের একটা বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছেন৷ সেই অধ্যায়ে আমরা সেই আত্মাকে স্মরণ করতে পারি৷ সকল আস্তিক্যবাদীরা পবিত্র আত্মাকে অর্জন করেছে, কিন্তু এই অধ্যায় আমাদের জানায় যে আমাদের আত্মার দিকে গমন করতে হবে, তাঁর নিয়ন্ত্রনে থাকতে স্বীকার করতে হবে৷ অর্থাৎ আমাদের জীবনে মানবদেহকে অনুসরণ করার চেয়ে পবিত্র আত্মাকে ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করাই শ্রেয়৷

পিটারের জীবনীর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে এই পবিত্র আত্মা কি পরিবর্তন আনতে পারেন, কারণ পবিত্র আত্মার দ্বার পূর্ণতা পাওয়ার আগে পিটার তিনবার প্রভু যীশুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিল – এবং এর পরে সে বলেছিল যে মৃত্যু পর্যন্ত সে খ্রীষ্টকে অনুসরণ করবে৷ এই আত্মার দ্বারা পূর্ণ হওয়ার পর সে সাহসের সাথে পেন্টেকস্ট-এ জিইসের সাথে কথা বলেছিল৷

আমরা যখন আত্মায় গমন করি তখন আত্মার আদেশ থেকে দূরে না সরে যাওয়ার চেষ্টা করি (যেমন 1 থেসালোনিয়ান্‍স 5:19-এ বলা হয়েছে) এবং তার পরিবর্তে আত্মার দ্বারা পূর্ণ হতে চাই (এফেন্‍সিয়ান্‍স্ 5:18-21)৷ কেউ কিভাবে পবিত্র আত্মার দ্বারা পূর্ণতা পেতে পারে? প্রথমত, এটি ঈশ্বরের পছন্দ যা কিনা ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে৷ তিনি এক একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করেন এক একটি কার্য সম্পন্ন করার জন্য এবং তাদের তাঁর আ্ত্মার দ্বারা পূর্ণ করেন (জেনেসিস্ 41:38; এক্সোডাস 31:3; নাম্বারস্ 24:2; 1 স্যামুয়েল 10:10)৷ এফেন্‍সিয়ান্‍স্ 5:18-21 এবং কোলোসিয়ান্‍স্ 3:16-তে প্রমান রয়েছে যে ঈশ্বর তাদেরকেই নির্বাচন করেন যারা আগে থেকেই ঈশ্বরের বাণীর দ্বারা প্রভাবিত৷ এটিই আমাদের দ্বিতীয় পন্থার দিকে নিয়ে যায়৷

বাইবেল, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণীতে বলা আছে, যে ঈশ্বর আমাদের নিজের বাণী দিয়েছেন সকল ভালো কাজ করতে নিজেদের সক্ষম করার জন্য (2 টিমোথি 3:16-17)৷ এটি আমাদের শেখায় যে কিভাবে বাঁচতে হয় এবং কি বিশ্বাস করতে হয়, এটি আমাদের কাছে প্রকাশিত হয় যখন আমরা ভুল পথ বেছে নিই, এটি আমাদের সঠিক পথে ফিরতে সাহায্য করে, এবং সেই পথে চলতে বা থাকতে সাহায্য করে৷ হিব্রুস্ 4:12 আমাদের জানায় যে ঈশ্বরের বাণী জীবন্ত এবং শক্তিশালী, আমাদের হৃদয়কে বিদ্ধ করতে পারে যার ফলে আমরা হৃদয় এবং আচরন থেকে গভীর পাপ অতিক্রম করতে পারি এবং তার মূলোচ্ছেদ করতে পারি৷ প্রার্থনা সঙ্গীত রচয়িতা স্লাম 119-এ এই গ্রন্থের জীবন-পরিবর্তনকারী ক্ষমতা সম্পর্কে বলেছেন৷ জশুয়াকে বলা হয়েছিল যে তার শত্রুদের জয় করার পথ হল এই পথকে না ভোলা বরং দিবারাত্রি এর ধ্যান করা এবং একে মান্য করা৷ সে তাই করেছিল, যদিও সামরিকভাবে এই নির্দেশ কার্যকর ছিল না, এবং এটি ছিল সেই জয়ের পথ যার দ্বারা প্রতিশ্রুতিমূলক ভূমি লাভ করা যায়৷

বাইবেলকে আমরাও প্রায়শই হাল্কাভাবে নিয়ে থাকি৷ আমরা এর প্রতি প্রতীকি সেবা করে থাকি বাইবেলকে গীর্জা অবধি বহন করে অথবা প্রতিদিন এর একটি অধ্যায় পড়ে, কিন্তু আমরা স্মরণ করতে, ধ্যান করতে এবং জীবনে এই গ্রন্থকে প্রয়োগ করতে ভুলে যাই; এর দ্বারা প্রকাশিত আমাদের পাপ আমরা স্বীকার করতে এবং ঈশ্বরের এই উপহারের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে আমরা ভুলে যাই৷ যখন বাইবেলের কথা আসে, আমরা প্রায়শই অনাগ্রহী হয়ে পড়ি৷ হয় আমরা এর থেকে ঠিক ততটাই গ্রহন করি যতটা আধ্যাত্মিক ভাবে বেঁচে থাকতে প্রয়োজন (কিন্তু কখনোই সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য বা আদর্শ খ্রীষ্টানের মত গ্রহন করি না), অথবা প্রায়ই তা গ্রহন করে থাকি তবে দীর্ঘ সময় ধরে ধ্যান করি না যা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য৷

এইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তুমি যদি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাণী পড়ার এবং স্মরণ করার অভ্যাস না কর তবে তা আরম্ভ করা উচিত৷ কেউ কেউ এই জাতীয় পত্রিকা পড়াটা উপকারী মনে করে৷ ততদিন পর্যন্ত অভ্যাস বজায় রাখ যতদিন পর্যন্ত না তুমি এর বিষয়ে কিছু লিখতে সক্ষম হচ্ছ৷ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কিছু প্রার্থনা আছে যার মাধ্যমে ঈশ্বরকে বলা হচ্ছে তিনি যে বিষয়ে এই গ্রন্থে বলেছেন সেই বিষয়ে মানুষকে সাহায্য করেন৷ বাইবেল হল সেই উপাদান যা আত্মা আমাদের জীবনে ব্যবহার করেন (এফেসিয়ান্‍স্ 6:17), অস্ত্রের একটি প্রয়োজনীয় এবং মূল অংশ যা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন আধ্যাত্মিক যুদ্ধে লড়াই করার জন্য(এফেন্‍সিয়ান্‍স্ 6:12-18)৷

তৃতীয় চরম পন্থা, যা পাপের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের হাতিয়ার তা হল প্রার্থনা৷ আবার এটি এমন একটি পথ যা একদিকে যেমন খ্রীষ্টানরা উচ্চারণ করে থাকে তেমন অন্যদিকে এর অপপ্রয়োগও হয়৷ আমাদের প্রার্থনার জন্য সমাবেশ, প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত সময় ইত্যাদি রয়েছে, কিন্তু পূর্বে গীর্জায় যেভাবে প্রার্থনা করা হত তা আমরা করি না (অ্যাক্টস্ 3:1; 4:31; 6:4; 13:1-3)৷ পল বারংবার বলেছেন যে তিনি যাঁদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ ঈশ্বরের জন্য কিভাবে প্রার্থনা করেছেন৷ ঈশ্বর এই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে আমাদের চমৎকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (ম্যাথিউ 7:7-11; লিউক 18:1-8; জন্ 6:23-27; 1 জন্ 5:14-15), এবং পল্ তাঁর অধ্যায়ে সেই প্রার্থনা যুক্ত করেছেন যার দ্বারা আমরা আধ্যাত্মিক লড়াই লড়তে পারব (এফেন্‍সিয়ান্‍স্ 6:18)৷

আমাদের জীবনে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? গেথসেমেনের উদ্যানে পিটারের উদ্দেশ্যে যীশু বাণী শুনিয়েছেন – পিটার যখন যীশুকে অস্বীকার করেছে তার ঠিক আগে৷ যীশু প্রার্থনা শুরু করতেই পিটার ঘুমিয়ে পড়ে৷ যীশু তাকে জাগান এবং বলেন, “দেখো এবং প্রার্থনা কর, তবে লোভ তোমাকে প্রলুব্ধ করতে পারবে না৷ আত্মা চাইছে, কিন্তু দেহ দুর্বল” (ম্যাথিউ 26:41)৷ আমরা পিটারের মত, যা সঠিক তা করতে চাই, তবে শক্তি খুঁজে পাই না৷ আমাদের উচিত খোঁজ, আঘাত এবং জিজ্ঞাসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের উপদেশকে অনুসরণ করা – এবং তিনিই আমাদের সেই শক্তি দেবেন যা প্রয়োজনীয় (ম্যাথিউ 7:7)৷ প্রার্থনা কোনো যাদু শক্তি নয়৷ প্রার্থনা হল আমাদের সীমাবদ্ধতাকে বুঝতে পারার ক্ষমতা এবং ঈশ্বরের অসীম শক্তি এবং সেই শক্তির জন্য তাঁর প্রতি নিজেকে সমর্পন করা যাতে আমরা যা চাই তা না করে তিনি যা চান আমরা তাই করতে পারি (1 জন্ 5:14-15)৷

পাপের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার চতুর্থ পন্থা হল গীর্জা, অন্যান্য বিশ্বাসীদের সাথে বন্ধুত্বভাব স্থাপন৷ যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের পাঠান তখন দু’জন দু’জন করে পাঠান(ম্যাথিউ 10:1)৷ অ্যাক্টের ধর্মপ্রচারকরা কখনো একা যান না, বরং দু’জন বা দল বেঁধে যান৷ যীশুর এরকম নির্দেশের কারন শুধুমাত্র আমাদের একত্রিত করা নয়, বরং তাঁর উদ্দেশ্য সেই সময়ে ভালো কাজ এবং প্রেমের দ্বারা যাতে তাঁরা একে অপরকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন (হিব্রুস্ 10:24)৷ তিনি বলেছেন আমরা যেন একে অপরের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করি (জেম্‍স্ 5:16)৷ ওল্ড টেস্টামেন্টের জ্ঞানমূলক সাহিত্য বলা হয়েছে লোহা যেমন লোহাকে ধারালো করে, তেমনই মানুষ মানুষকে প্রভাবিত করে (প্রোভার্বস্ 27:17)৷ সংখ্যার মধ্যেই রয়েছে শক্তি(এক্লেসিয়েস্‍টেস্ 4:11-12)৷

বহু খ্রীষ্টান লক্ষ্য করেছেন যে একজন সঠিক সহযোগি থাকলে অনেক পাপ অতিক্রম করা যায়৷ অন্য একজন মানুষ যে কিনা তোমার সাথে কথা বলতে, প্রার্থনা করতে, উৎসাহ দিতে এবং তিরষ্কার করার জন্য থাকলে অনেক উপকার হয়৷ লোভ আমাদের সকলেরই আসে (1 কোরিন্থিয়ান্‍স্ 10:13)৷ একজন বা একদল সঠিক সহযোগি থাকলে, তারা আমাদের সবচেয়ে চরম পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত উৎসাহ যোগাতে পারে৷

কখনো পাপের বিরুদ্ধে জয় সহজেই আসে৷ আবার কখনো তা আসে খুব ধীরে৷ ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আমরা যদি তাঁর উপদেশ পালন করি তবে তিনি ধীরে ধীরে আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনবেন৷ তাই আমরা পাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রচেষ্টা করতে পারি, কারন আমরা জানি তিনি যে কোনো মূল্যে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন৷