ভূমিকা
Preface
বাইবেলের এই সংস্করণ তাঁদের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে যাঁরা সাধারণ মানুষ, যাদের বোধবুদ্ধি এবং পাণ্ডিত্য অসাধারণ রকমের নয়, অথচ যাঁদের এই শাস্ত্রপাঠের প্রয়োজন আছে। এই সংস্করণের প্রস্তুতির পিছনে যে মূল ভাবনা বিশেষভাবে সক্রিয় রযেছে তা হল ভালো অনুবাদ ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া। এই পুস্তকের অনুবাদকেরা প্রধানতঃ এই চিন্তার দ্বারাই অনুপ্রাণিত হযেছেন: কিভাবে বাইবেলের রচয়িতাদের বাণীগুলি তেমনই স্বাভাবিক এবং কার্যকরীভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, যেমনটি মূল রচনাগুলি তখনকার মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। অভিধান খুঁজে কেবল মূল শব্দগুলির ভাষান্তর করাই বিশ্বস্ত অনুবাদ নয়। বিশ্বস্ত অনুবাদ বাণীগুলিকে প্রকাশ করবে এমন একটি চেহারায যা শুধুমাত্র মূলের অর্থই বহন করবে না, বরং হাজার হাজার বছর আগেকার সময়ের মতোই একই রকমের প্রাসঙ্গিকতার আবহাওয়া তৈরী করবে, সেই রকমই কৌতুহলের উদ্রেক ঘটাবে এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
কাজেই এই পুস্তকের অনুবাদকদের কাছে কার্যকরী যোগাযোগের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর জন্যে অনুবাদ যথাযথ করবার বিষয়টি যে কম গুরুত্ব পেয়েছে এমন নয়, তবে 'যথার্থ' বলতে এঁরা বুঝেছেন ধ্যানধারণাগুলির বিশ্বস্ত প্রতিনিধিত্ব, ভাষাগত বৈশিষ্টগুলির নিখুঁত চেহারাবদল নয়।
শাস্ত্রের রচয়িতারা, বিশেষ করে যাঁরা 'নূতন নিয়ম' এর রচনাগুলি লিখেছিলেন, তাঁদের ভাষা শৈলী ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে তাঁরা মূলতঃ উত্তম যোগাযোগের বিষয়েই উৎসাহী ছিলেন। এই বাংলা সংস্করণের প্রস্তুতকারকেরা ঐ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে প্রয়াসী হয়েছেন। তাই তাঁদের বিশেষ পাঠক সমাজের কাছে বাইবেলের বাণীগুলি তাঁরা সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গীতে পৌঁছে দিতে চেযেছেন। বর্তমান অনুবাদকগণ ভাষাকে ব্যবহার করেছেন শাস্ত্রের সত্যের কুঠুরিগুলির দরজার তালা খোলবার চাবি হিসেবে।
বোধগম্যতা বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে। শক্ত অথবা দ্ব্যর্থক শব্দ বা বাক্যবন্ধগুলি অনেক সময় অল্প কথায় ব্যাখ্যা করে দেওয়া হযেছে। কখনও বা সমার্থক শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করা হযেছে। প্রয়োজনবোধে পদ টীকা ব্যবহার করা হযেছে। অনেক সময়েই শাস্ত্রের উদ্ধৃতিগুলি চিহ্নিত করা হযেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ বাক্য ও বাণীগুলির পাঠান্তর নির্দেশ করা হযেছে। মাঝেমধ্যে প্রসঙ্গের মধ্যে নিহিত শব্দ বা মন্তব্যগুলি অনুবাদে পরিষ্কার লিখে দেওয়া হযেছে। আমাদের বিশ্বাস এই যত্ন ও পরিশ্রম প্রিয় পাঠককে উপযুক্তভাবে সাহায্য করবে।
Introduction
সূচনা
বাইবেলের শেষ অংশ যে লেখাগুলির সমষ্টি, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেইগুলিকে একত্রে “নূতন নিয়ম” নামে অভিহিত করা হয়েছে, আর এই বাইবেলের প্রথম অংশটির নাম “পুরাতন নিয়ম।” প্রকৃতপক্ষে, 'বাইবেল' শব্দটির উৎ‌পত্তি একটি গ্রীক শব্দ থেকে যার অর্থ “পুস্তকসকল।” অনুবাদে “নিয়ম” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল “চুক্তি” কথাটিতে তারই ইঙ্গিত আছে। মোশির সময়ে ঈশ্বর ইস্রাযেলের ইহুদীদের সঙ্গে যে চুক্তিগুলি করেছিলেন, পুরাতন নিযম হল, সেই লেখাগুলির সমষ্টিগত রূপ। এরপর ঈশ্বর, খ্রীষ্ট বিশ্বাসী সমস্ত মানুষের সাথে যে চুক্তি করলেন, সেই লেখাগুলি নিযেই “নূতন নিয়ম” সংকলিত।
ইহুদীদের পরিচালনা করার সময় ঈশ্বর যেসব মহত্ কাজ করেছিলেন তার একটি বিবরণ পুরাতন নিয়মের লেখাগুলিতে পাওয়া যায়; এবং সেই সঙ্গে তাঁর আশীর্বাদ সারা জগতের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে এই লোকেদের ব্যবহার করার যে পরিকল্পনা ঈশ্বর করেছিলেন তাও এই পুরাতন নিয়মের লেখাগুলি প্রকাশ করে। এই লেখাগুলিতে ভবিষ্যতের বিষয়ে ইঙ্গিত আছে যে, ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা কার্য্যকরী করার জন্য একজন ত্রাণকর্তাকে বা (“খ্রীষ্ট”) পাঠাবেন। নূতন নিয়মের লেখাগুলি পুরাতন নিয়মের কাহিনীর পূর্ণতা। এগুলিতে সেই ত্রাণকর্তা (অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের) আবির্ভাবের বর্ণনা আছে এবং সমস্ত মানবজাতির কাছে তাঁর আগমন তাত্‌পর্য্য। কাজেই নূতন নিযম বোঝবার জন্য পুরাতন নিয়মের প্রয়োজন, যেহেতু প্রয়োজনীয় পটভূমিকা ওখানেই পাওয়া যাবে। আবার পুরাতন নিয়মে যে পরিত্রাণের কাহিনীর শুরু, নূতন নিয়মে তা পূর্ণতা পেয়েছে।
পুরাতন নিয়ম
এই পুরাতন নিয়ম হল নানান রচয়িতার লেখআ উনচল্লিশটি পুস্তকের সঙ্কলন। এগুলি প্রধানতঃ প্রাচীন ইস্রায়েলের ভাষা হিব্রুতে রচিত। অবশ্য এর কিছু কিছু অংশ বাবিল সাম্রাজ্যের সরকারী ভাষা “আকামাইক” এ লেখা। পুরাতন নিয়মের কিছু কিছু অংশ সাড়ে তিন হাজার বছরেরও বেশী আগে লেখা হয়েছিল এবং এর প্রথম পুস্তক রচনার সময় থেকে শেষ পুস্তক রচনাকালের মধ্যে এক হাজার বছরেরও বেশী ব্যবধান ছিল। এই সঙ্কলনে আইন, ইতিহাস, গদ্য, সঙ্গীত এবং কাব্য সংক্রান্ত পুস্তক আছে। এছাড়াও আছে জ্ঞানী মানুষদের দেওয়া নানারকম শিক্ষা।
পুরাতন নিয়মকে প্রায়শঃই তিনটি প্রধান পর্বে ভাগ করা হয়: বিধি-ব্যবস্থা, ভাববাদীগণ এবং পবিত্র রচনাবলী। “বিধি-ব্যবস্থা” পর্বটির অন্তর্গত পাঁচটি পুস্তক “মোশির পাঁচ পুস্তক” নামে পরিচিত। এর প্রথম পুস্তক আদিপুস্তক। এতে আছে বিশ্ব সৃষ্টির ঘটনাবলী, আদি মানব ও মানবী এবং তাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রথম পাপাচরণের ঘটনা। এই গ্রন্থে মহাপ্লাবনের কথা আছে এবং ঈশ্বর এই প্লাবনের সময় যে পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন তার কথা রয়েছে। আর রয়েছে ইহুদী জাতির জাতি হিসাবে উত্থানের কাহিনী, যে ইহুদীদের ঈশ্বর এক বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন।
অব্রাহামের কাহিনী
ঈশ্বর অব্রাহাম নামে এক মহত্ বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তিতে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ছিল যে তিনি অব্রাহামকে এক মহান জাতির পিতা করে তুলবেন এবং তাঁকে ও তাঁর বংশধরদের দেবেন কনান নামক দেশে। অব্রাহাম এই চুক্তি গ্রহন করলেন, আর তা দেখানোর জন্যে তিনি সুন্নত হলে এবং ঈশ্বর এবং তাঁর মানবগোষ্ঠীর মধ্যে চুক্তির প্রমাণস্বরূপ হয়ে উঠল এই সুন্নত প্রক্রিয়া। ঈশ্বর কি করে তাঁর প্রতিশ্রুতি কাজগুলি করবেন সে সম্বন্ধে অব্রাহামের কোন ধারণা ছিল না, কিন্তু অব্রাহাম ঈশ্বরের উপর তাঁর বিশ্বাস স্থাপন করলেন। এতে ঈশ্বর খুবই খুশী হলেন।
মেসোপটেমিয়ার ইব্রীয়দের মধ্যে অব্রাহামের যে বাসভূমি ছিল, ঈশ্বর অব্রাহামকে তা ত্যাগ করতে বললেন এবং তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতি কনান দেশে (যার আরেক নাম পলেষ্টীয়) নিয়ে গেলেন। বৃদ্ধ বয়সে অব্রাহামের এক পুত্র সন্তান জন্মালো যার নাম ইসহাক। ইসহাক বড় হয়ে উঠলেন এবং পরে যাকোব নামে তাঁর এক সন্তান হল। এই যাকোব (যার আরেক নাম ইস্রায়েল) পরে বারোটি পুত্র ও একটি কন্যার জনক হলেন। এই পরিবার হয়ে উঠল ইস্রায়েল জাতি; কিন্তু এঁরা কখনও এঁদের গোষ্ঠীর উত্তপত্তির ইতিহাস ভুলে যান নি। এই পরিবার নিজেদের ইস্রায়েলের বারোটি উপজাতি (বা পারিবারিক সম্প্রদায়) হিসেবে পরিচয় দিতে থাকলেন; এঁরা ছিলেন যাকোবের সেই বারোজন পুত্রের বংশধর যাদের নাম ছিল রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, দান, নপ্তালি, গাদ, আশের, ইষাখার, সবূলূন, যোষেফ এবং বিন্যামীন। এঁদের মধ্যে তিনজন প্রধান পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোব ইস্রায়েলের ‘পিতৃপুরুষ’ হিসেবে পরিচিত।
প্রাচীন ইস্রায়েলে অনেকবার ঈশ্বর কিছু কিছু মানুষকে তাঁর মুখপাত্র হিসেবে আহ্বান করেছিলেন। এই মুখপাত্রগণ ও ভাববাদীগণ মানুষের কাছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ছিলেন। ভাববাদীদের মাধ্যমে ঈশ্বর ইস্রায়েলের জনগণকে অনেক প্রতিশ্রুতি, সতর্কবাণী, বিধি-ব্যবস্থা, অতীত অভিজ্ঞতালদ্ধ শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। শাস্ত্রে উল্লিখিত প্রথম ভাববাদী হচ্ছেন “হিব্রু” অব্রাহাম। এই অব্রাহামকেই আরেক ধরণের পিতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত ইস্রায়েল
যাকোবের পরিবার বেড়ে উঠল এবং প্রায় সত্তর জন প্রত্যক্ষ বংশধর তার অন্তর্ভুক্ত হল। তাঁর পুত্রদের একজন যোষেফ, মিশরে একজন বড় সরকারী কর্মচারী হয়েছিলেন। তারপর দুর্দিন এলে যাকোব ও তাঁর পরিবার মিশরে চলে গেলেন। সেখানে খাদ্যদ্রব্যের প্রাচুর্য্য ছিল এবং জীবনধারন ছিল সহজ, সরল। হিব্রুদের এই উপজাতি ক্রমে একটি ছোট জাতিতে পরিণত হল; এরপর মিশরেরর রাজা (ফারাও) এই লোকগুলিকে ক্রীতদাসে পরিণত করলেন। চারশ বছর পরে ঈশ্বর কিভাবে ভাববাদী মোশিকে ব্যবহার করে ইস্রায়েলীয়দের মিশরের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং তাদের পলেষ্টীয়ায় ফিরিয়ে এনেছিলেন, তার বিবরণ রয়েছে “যাত্রাপুস্তক” নামক পুস্তকে। এই মুক্তির জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল, কিন্তু সেই মূল্য দিয়েছিলেন মিশরীয়গণ। শেষপর্যন্ত ঐ লোকদের (ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দিতে ফারাও যখন রাজী হলেন ততদিনে ফারাও এবং মিশরের সমস্ত পরিবার তাদের প্রথম পুত্রদের হারিয়েছিলেন। প্রথমজাত পুত্রদের মৃত্যুবরণ করতে হল যাতে মানুষগুলিকে মুক্তি দেওয়া যায় এবং পরবর্তীকালে ইস্রায়েলীয়রা নানাভাবে তাদের উপাসনা ও বলিদানে সময় এই কথা স্মরণ করত।
ইস্রায়েলের লোকেরা মুক্তির পথে যাত্রার জন্য তৈরী হল। তারা মিশর থেকে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। প্রত্যেক পরিবার একটি মেষশাবক বধ করে আগুনে ঝলসে নিল। ঐ মেষশাবকের রক্ত তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশেষ চিহ্ন হিসেবে তাদের দরজার চৌকাঠগুলি উপর ছিটিয়ে দিল। খামিরবিহীন রুটি তাড়াহুড়ো করে তৈরী করে খেয়ে নিল। সেই রাত্রে প্রভুর দূত ঐ দেশের ওপর দিয়ে গেলেন। যে পরিবারের দরজার চৌকাঠে মেষশাবকের রক্ত ছিল না তাদের প্রথমজাতদের মৃত্যু হল। এর ফলে মিশরীয়দের পরিবারের প্রথমজাত সন্তান, এমনকি মিশরের রাজা ফারাও তাঁর সন্তান হারালেন এবং বাধ্য হয়ে শেষে ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দিলেন, কিন্তু যখন দাসেরা মিশর ত্যাগ করবার জন্য প্রস্তুত হল, ফারাও তাঁর মত পরিবর্তন করলেন। তিনি ইস্রায়েলীয় দাসদের ধরে ফিরিয়ে আনার জন্যে তাঁর সৈন্যবাহিনী পাঠালেন, কিন্তু ঈশ্বর তাঁর লোকদের বাঁচালেন। ঈশ্বর লোহিত সাগরকে দুই ভাগে বিভক্ত করলেন, তাঁর লোকদের তার মধ্য দিয়ে অপরপারে নিয়ে গেলেন এবং পিছনে ধাওয়া করা মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করলেন। তারপর, আরব উপদ্বীপের মধ্যে কোন এক স্থানে সিনাই মরুভূমির এক পাহাড়ে ঈশ্বর এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একটি বিশেষ চুক্তি করলেন।
মোশির বিধি-ব্যবস্থা
এইভাবে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করে এবং তাদের সঙ্গে সীনয়তে চুক্তি করে ঈশ্বর তাদের অন্য সমস্ত জাতি থেকে আলাদা করে এক পৃথক অস্তিত্ব দিলেন। এই চুক্তিতে ইস্রায়েলীয়দের জন্যে অনেক প্রতিশ্রুতি ও বিধি-ব্যবস্থা ছিল। এই চুক্তির একাংশ যা দশ বিধান নামে পরিচিত, তা ঈশ্বর দুই পাথরের ফলকের উপর লিখে লোকেদের দিলেন। ইস্রায়েলীয়দের কাছে ঈশ্বর যে ধরণের জীবনযাপন প্রত্যাশা করেছিলেন তার মূল নীতিগুলিই এই দশ বিধানে দেওয়া ছিল। একজন ইস্রায়েলীয়ের তার ঈশ্বর, পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতি কি কর্তব্য তাও এর আওতার মধ্যে পড়ত। এই দশ বিধান এবং সীনয় পর্বতে দেওয়া অন্যান্য নিয়ম ও শিক্ষাগুলি “মোশির বিধি-ব্যবস্থা” নামে কেবল “বিধি-ব্যবস্থা” নামেই পরিচিত। অনেকসময়ই এই শব্দগুলি শাস্ত্রের প্রথম পাঁচটি গ্রন্থ এবং প্রায়শঃই সম্পূর্ণ পুরাতন নিয়ম (বা পুরাতন চুক্তি) সম্পর্কে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। দশ বিধান এবং অন্য কিছু আচরণ বিধি ছাড়াও মোশির বিধি-ব্যবস্থাতে রয়েছে যাজকদের সম্পর্কে, বলিদান ও উপাসনা এবং পবিত্র দিনগুলি সম্পর্কে বিধান এবং নির্দেশ। এই বিধানগুলি লেবীয় পুস্তকে পাওয়া যায়। মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে সমস্ত যাজক এবং তাদের সহকারীরা লেবীর গোষ্ঠী থেকে এসেছিলেন। এইসব সহকারীকে বলা হোত লেবীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যাজককে মহাযাজক বলা হত।
“পবিত্র তাঁবু” অথবা সভা তাঁবু যেখানে ঈশ্বরের উপাসনার জন্যে ইস্রায়েলীয়রা যেতেন, তা তৈরী করার নির্দেশনামাও এই বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে আছে। উপাসনাকালে ব্যবহারের জন্য যে সব জিনিস প্রয়োজন হবে সেগুলি তৈরী করার নির্দেশাবলীও এতে আছে। এর ফলে জেরুশালেমের সীয়োন পর্বতের উপর মন্দির নির্মাণের জন্যে ইস্রায়েলীরা প্রস্তুত হলেন। পরবর্তীকালে এই মন্দিরেই ঈশ্বরের উপাসনার জন্যে লোকেরা যেতেন। বলি এবং উপাসনার বিধানগুলি লোকেদের এটা বুঝতে সাহায্য করল যে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে থাকে। কিন্তু এই বিধানগুলি একই সঙ্গে পুনর্মিলিত হবে। মানুষের মুক্তির জন্যে ঈশ্বর যে বলিদান প্রস্তুত করছিলেন, পুরাতন নিয়মের বলিদানগুলি তা আরও ভালভাবে বোঝবার পথ করে দিল।
বিধি-ব্যবস্থাতে অনেকগুলি পবিত্র দিন এবং উত্সব পালন করবার নির্দেশাবলী ছিল। প্রত্যেকটি উত্সবেরই নিজস্ব বিশেষ অর্থ ছিল। কতকগুলি (উত্সব) ছিল বছরের নানান বিশেষ সময় পালনের আনন্দদায়ক উপলক্ষ্য যেমন প্রথম ফলের কর্তন উত্সব, সাবাথ (পঞ্চাশত্তমী অর্থাৎ সপ্তাহ পালনের উত্সব) এবং সাকোথ (অর্থাৎ কুটিরবাস পর্ব।)
এর মধ্যে কিছু উত্সবের দ্বারা ঈশ্বর তাঁর লোকদের জন্য যে সব আশ্চর্য্য কাজ করেছেন তা স্মরণ করা হত। নিস্তারপর্ব ছিল এইরকম একটি উত্সব। এই পর্বে প্রত্যেকটি পরিবার মিশর থেকে বেরিয়ে আসার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরেকবার যেতেন। লোকেরা ঈশ্বরের প্রশংসা গান গাইতেন। একটি মেষশাবক বধ করা হত এবং আহার্য প্রস্তুত করা হত। প্রতিটি পানপাত্র এবং প্রতিটি খাদ্যের টুকরো লোকেদের স্মরণ করিয়ে দিত তাদের বেদনা ও দুঃখের জীবন থেকে উদ্ধার করার জ্যে ঈশ্বর যা কিছু করেছিলেন সে সব কথা।
অন্য কতকগুলি উত্সব ছিল গভীর তাত্পর্যপূর্ণ। প্রত্যেক বছর, প্রায়শ্চিত্তের দিনে, লোকেদের মনে করতে হত অন্যদের প্রতি এবং ঈশ্বরের প্রতি তারা কত মন্দ কাজ করেছে। এই দিনটি ছিল বিষাদের দিন এবং লোকেরা এদিন কোন আহার্য গ্রহণ করত না। এই দিনে মহাযাজক মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও ক্ষমার জন্য বিশেষ বলি উত্সর্গ করতেন।
পুরাতন নিয়মের রচয়িতাদের কাছে ঈশ্বর এবং ইস্রায়েলের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাববাদীদের এবং পবিত্র রচনাগুলির প্রায় সব গ্রন্থগুলিই এই সত্যের উপর ভিত্তি করে লেখা যে ইস্রায়েল জাতি এবং ইস্রায়েলের প্রতিটি মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে এক অতি বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। তাঁরা এই চুক্তির নাম দিয়েছিলেন, “প্রভুর চুক্তি” বা আরো সহজ কথায় শুধু “চুক্তি।” তাঁদের ইতিহাস গ্রন্থগুলি সমস্ত ঘটনাকে এই চুক্তির আলোতে ব্যাখ্যা করেছে। যদি ব্যক্তি বিশেষ অথবা জাতি ঈশ্বরের প্রতি এবং ঐ চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতেন তাহলে ঈশ্বর তাদের পুরস্কৃত করতেন। যদি লোকেরা চুক্তিটিকে অগ্রাহ্য করতেন তাহলে ঈশ্বর তাঁদের দণ্ড দিতেন। ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীদের পাঠাতেন যাতে তাঁরা লোকেদের ঐ চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ইস্রায়েলের কবিরা একদিকে যেমন তাঁর বাধ্য লোকেদের জন্যে ঈশ্বরের কথা সমস্ত বিস্ময়কর কাজের বন্দনা করেছেন, তেমনি তাঁর অবাধ্য মানুষদের যে যন্ত্রণা ও শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে তার বিষয়েও শোক প্রকাশ করেছেন। এইসব রচয়িতা ঠিক ও ভুল বিষয়ে তাঁদের ধারণাগুলি ঐ চুক্তির শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়তেন; আর যখন নির্দোষ লোকেরা কষ্ট পেতেন তখন কবিরা প্রাণপণ বুঝতে চেষ্টা করতেন কেন এমন হত।
ইস্রায়েল রাজ্য
প্রাচীন ইস্রায়েলের কাহিনীতে রয়েছে কিভাবে লোকেরা ঈশ্বরকে ত্যাগ করলো, ঈশ্বর কিভাবে তাদের উদ্ধার করলেন, এই লোকেরা কিভাবে ঈশ্বরের কাছে ফিরল এবং আবার কিভাবে তাঁকে পরিত্যাগ করল এই সব ঘটনার চক্র। এই চক্রের শুরু হয় লোকেরা ঈশ্বরের চুক্তি গ্রহণ করার অব্যবহিত পরেই। এর পুনরাবৃত্তি বারংবার ঘটলো। সীনয় পর্বতে ইস্রায়েলীগণ ঈশ্বরকে অনুসরণ করার সন্মতি দিয়েছিল। তারপর তারা বিদ্রোহ করলো এবং মরুভূমিতে চল্লিশ বৎসর ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হল। শেষ পর্যন্ত মোশির সহকারী যিহোশূয় লোকেদের নিয়ে প্রতিশ্রুত দেশে গেলেন। শুরুতে এক বিজয় অভিযান এবং আংশিক ইস্রায়েল রাজ্যের উপনিবেশ স্থাপন হল। এই উপনিবেশ স্থাপনের পর প্রথম কয়েক শতাব্দী ধরে জনগণ বিচারক নামে পরিচিত স্থানীয় নেতাদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল।
কালক্রমে, লোকেরা চাইল একজন রাজা। প্রথম রাজা হলেন শৌল। শৌল ঈশ্বরকে মান্য করলেন না, ফলে ঈশ্বর দায়ূদ নামে এক মেষপালককে নতুন রাজা হিসেবে নির্বাচন করলেন। ভাববাদী শমূয়েল এসে তাঁর মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে তেল ঢেলে তাঁকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করলেন। ঈশ্বর দায়ূদকে কথা দিলেন যে যিহূদার উপজাতি থেকে আসা তাঁর বংশধরগণই ভবিষ্যতে ইস্রায়েলের রাজা হবেন। দায়ূদ জেরুশালেম নগরী জয় করলেন এবং সেই নগরীকে তাঁর রাজধানী এবং ভবিষ্যৎ উপাসনা গৃহের স্থআন হিসেবে নির্বাচন করলেন। তিনি উপাসনাগৃহে উপাসনার জন্যে যাজক, ভাববাদী, গীতিকার, সংগীতকার এবং গায়কদের একত্র করলেন। দায়ূদ নিজেও অনেকগুলি গান লিখলেন, কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে উপাসনা গৃহ নির্মাণ করতে দিলেন না।
বৃদ্ধ বয়সে যখন তাঁর মৃত্যু আসন্ন তখন দায়ূদ তাঁর পুত্র শলোমনকে ইস্রায়েলের রাজা করলেন। পুত্রকে তিনি সাবধান করে দিলেন যেন সে সর্বদাই ঈশ্বরের কথামতো চলে এবং চুক্তি মান্য করে। রাজা থাকাকালীন শলোমন উপাসনাগৃহ নির্মাণ করলেন, আর ইস্রায়েলের সীমানা বিস্তৃত করলেন। এই সময়ে ইস্রায়েল তার মহিমার চূড়ায় পৌঁচেছিল। শলোমন বিখ্যাত হলেন এবং ইস্রায়েল হল শক্তিশালী।
যিহূদা এবং ইস্রায়েল বিভক্ত রাজ্য
শলোমনের মৃত্যুর পরই গৃহ যুদ্ধ দেখা দিল এবং দেশ বিভক্ত হয়ে গেল। উত্তরের দশটি উপজাতি নিজেদের ইস্রায়েল নামে পরিচয় দিল। দক্ষিণের উপজাতিগুলি যিহূদা নাম নিল। (আধুনিক নাম ইহুদী এই নাম থেকে এসেছে) যিহূদা চুক্তির প্রতি আনুগত্য অটুট রাখল এবং দায়ূদের বংশধরগণ জেরুশালেমে রাজত্ব করলেন; অবশেষে যিহূদা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হল এবং বাবিলবাসীদের দ্বারা এই যিহূদার লোকেরা নির্বাসিত হল।
উত্তরের রাজ্য ইস্রায়েলে বেশ কয়েকটি বংশ এলো এবং গেলো, কারণ সেখানকার লোকেরা “চুক্তি” মানলো না। ইস্রায়েলের রাজাদের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন নগরে রাজধানী ছিল এবং এগুলির মধ্যে শেষতম ছিল শমরীয় নগর। জনগণের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্যে ইস্রায়েলের রাজারা ঈশ্বর উপাসনার পদ্ধতি বদল করলেন। তাঁরা নতুন যাজকদের নির্বাচন করলেন এবং দুটি নতুন মন্দির তৈরী করলেন; একটি ইস্রায়েলের উত্তর সীমানায় “দান” নামক স্থানে এবং অপরটি ইস্রায়েল ও যিহূদা সীমানা বরাবর “বেথেলে।” এরপর ইস্রায়েল এবং যিহূদার মধ্যে বহু যুদ্ধ সংঘটিত হল।
গৃহযুদ্ধ এবং নানারকম ঝামেলার এই সময়টাতে ঈশ্বর যিহূদা ও ইস্রায়েলে অনেক ভাববাদীকে পাঠালেন। কয়েকজন ভাববাদী যাজক হিসেবে এলেন এবং অন্যরা এলেন কৃষক হিসেবে। এঁদের কেউ কেউ রাজাদের পরামর্শদাতা ছিলেন, অন্যরা অনেক বেশী সাদাসিধে জীবনযাপন করলেন। ভাববাবীদের কয়েকজন তাঁদের শিক্ষাগুলি অথবা ভাববাণী সকল লিখে রাখলেন। অন্য অনেকেই তা করলেন না। কিন্তু সব কজন ভাববাদীই ন্যায়বিচার, ন্যায্য ব্যবহার এবং সাহায্যের জন্যে ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করলেন।
বহু ভাববাদীই এই সতর্কবানী উচ্চারণ করলেন যে জনগণ পরাস্ত এবং ছত্রখান হয়ে যাবে যদি না তারা ঈশ্বরের দিকে ফেরে। ভাববাদীদের কেউ কেউ ভাবী মহিমানর এবং ভাবী শাস্তির বিষয়ে দর্শন পেলেন। তাঁদের অনেকেই আবার ভবিষ্যতে সেই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন যখন রাজ্য শাসন করার জন্যে একজন নতুন রাজা আসবেন। কেউ কেউ এই রাজাকে দায়ূদের বংশধর হিসেবে দেখলেন, যিনি ঈশ্বরের লোকেদের এক নতুন স্বর্ণযুগে নিয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার বললেন এই রাজা চিরকালীন রাজ্যে চিরদিনের জন্যে রাজত্ব করবেন। অন্যরা আবার তাঁকে দেখলেন এক দাস হিসেবে, যিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁর জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেক কষ্ট ভোগ করবেন। কিন্তু এঁরা সবাই তাঁকে দেখলেন মশীহ হিসেবে, যিনি ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত এবং অভিষিক্ত নতুন যুগের প্রবর্তক।
ইস্রায়েল এবং যিহূদার ধ্বংসপ্রাপ্তি
ইস্রায়েলের লোকেরা ঈশ্বরের সাবধান বাণীগুলিতে কর্ণপাত করে নি, ফলে খ্রীষ্টপূর্ব 722/721 অব্দে আক্রমণকারী অশূরীয়দের কাছ শমরীয় পরাজয় স্বীকার করলো। ইস্রায়েলীদের তাদের নিজ নিজ গৃহ থেকে সরিয়ে নিয়ে অশূরীয় সাম্রাজ্যের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হোল; এরা যিহূদায় বসবাসকারী ভাই ও বোনেদের কাছ থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেল।
তারপর অশূরীয়গণ বিদেশীদের নিয়ে এল ইস্রায়েল ভূখণ্ডে পুনরায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য। যিহূদা এবং ইস্রায়েলের ধর্ম বিষয়ে এই লোকেদের শিক্ষা দেওয়া হল এবং এদের অনেকেই “চুক্তি” পালনের চেষ্টা করল। এই জনগোষ্ঠী ক্রমে শমরীয় নামে পরিচিত হল। অশূরীয়রা যিহূদা অভিযানের চেষ্টা করল। অনেক নগর আক্রমণকারীদের পদানত হল; কিন্তু ঈশ্বর জেরুশালেমকে রক্ষা করলেন। পরাজিত অশূরীয় রাজা তাঁর নিজের দেশে ফিরলেন এবং সেখানে তাঁর পুত্রদের মধ্যে দুজন তাঁকে হত্যা করল। এইভাবে যিহূদা রক্ষা পেল।
অল্প কিছুদিনের জন্য যিহূদার লোকেরা বদলে গেল। তারা অল্প সময়ের জন্য ঈশ্বরের বাধ্য হল; কিন্তু তারাও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হল ও ছড়িয়ে গেল। বাবিলের জাতি ক্ষমতায় উন্নীত হল এবং যিহূদা অভিযান করল। প্রথমে তারা কেবল অল্পসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ লোককে বন্দী করে নিয়ে গেল। কিন্তু কয়েক বছর পরে 587/586 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে তারা আবার ফিরে এসে জেরুশালেম এবং উপাসনাগৃহটি (মন্দিরটি) ধ্বংস করল। জনগণের কেউ কেউ মিশরে পালিয়ে গেল; কিন্তু তাদের অধিকাংশকেই দাস হিসেবে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হল। আবার ঈশ্বর লোকেদের কাছে তাঁর ভাববাদীদের পাঠালেন এবং লোকেরা তাঁদের কথা শুনতে লাগল। মনে হয়, জেরুশালেম মন্দিরের ধ্বংসপ্রাপ্তি এবং বাবিলে তাদের নির্বাসন, এই ঘটনাগুলি লোকেদের মধ্যে একটা সত্যিকার পরিবর্তন আনল। ভাববাদীরা আরও বেশী করে নতুন রাজা এবং তাঁর রাজ্যের কথা বলতে লাগলেন। ভাববাদীদের একজন যিরমিয় এমনকি নতুন এক চুক্তির কথাও বললেন, যে নতুন চুক্তি প্রস্তর ফলকে লেখা হবে না, লেখা হবে ঈশ্বরের আপন জনগোষ্ঠীর অন্তরে।
ইহুদীরা ফিলীস্তিনে ফিরল
ইতিমধ্যে মধ্য পারস্য সাম্রাজ্যে সাইরাস ক্ষমতায় এলেন এবং বাবিল অধিকার করলেন। সাইরাস সেখানে বাসরত যিহূদার লোকেদের তাদের দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন। কাজেই সত্তর বছর নির্বাসন ভোগ করার পর অনেক যিহূদাবাসী দেশে ফিরলেন। তাঁরা তাঁদের রাজ্য পুনর্গঠন করতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু যিহূদা ক্ষুদ্র ও দুর্বল রয়ে গেল। জনগণ আবার মন্দিরটি নির্মাণ করল, এই মন্দির সলোমনের তৈরী মন্দিরের মতো সুন্দর হল না। কিন্তু অনেকেই সত্যি সত্যি ঈশ্বরাভিমুখী হল, বিধি-ব্যবস্থা পাঠ করতে শুরু করল, ভাববাদীদের লেখাগুলি এবং অন্যান্য পবিত্র রচনাসমূহ পড়তে লাগল। বহু লোকে লেখক (অর্থাৎ বিশেষ পণ্ডিত) হয়ে উঠলো এবং শাস্ত্রগুলির নকল তৈরী করল। ক্রমে এরা শাস্ত্র অধ্যয়ণের পাঠশালার বন্দোবস্ত করল। বিশ্রামবারের (শনিবার) দিনগুলিতে লোকেরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের উপাসনা শুরু করল। তাদের সমাজগৃহে (যেগুলি সভাগৃহ নামে পরিচিত হল) তারা মনোযোগ সহকারে শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে লাগল এবং তাদের অনেকে খ্রীষ্টের আগমনের প্রতীক্ষা করতে লাগল।
পশ্চিমে মহামতি আলেকসান্দার গ্রীসের নিয়ন্ত্রণ দখল করলেন এবং শীঘ্রই সারা পৃথিবী জয় করলেন। তিনি গ্রীক ভাষা এবং গ্রীসের কৃষ্টি ও আচার বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে দিলেন। তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে গেল এবং শীঘ্রই আরেকটি সাম্রাজ্যের অভ্যুত্থান হল, যে সাম্রাজ্য তখনকার পৃথিবীর বিশাল এক অংশের দখল নিল, যার মধ্যে ছিল ফিলীস্তিন, যেখানে যিহূদার লোকেরা বসবাস করছিল।
এই নতুন শাসকগণ যারা রোমান নামে পরিচিত, প্রায়শঃই নিষ্ঠুর এবং রূঢ় ব্যবহার করতেন, অন্যদিকে ইহুদীরা ছিলেন অহঙ্কারী এবং উদ্ধত। এই অস্থির ও কঠিন সময়ে অনেক ইহুদীই তাঁদের জীবদ্দশায় খ্রীষ্টের আবির্ভাবের অপেক্ষায় থাকলেন। ইহুদীরা কেবল ঈশ্বর এবং ঈশ্বর যে খ্রীষ্টকে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর দ্বারাই শাসিত হতে চাইছিলেন। তাঁরা বুঝতে পারেন নি যে ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষা করবার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন ঈশ্বরের পরিকল্পনা বুঝি শুধু জগৎ‌ থেকে ইহুদীদের উদ্ধার করা! তাঁদের কেউ কেউ ঈশ্বরের খ্রীষ্ট প্রেরণের অপেক্ষাতেই সন্তুষ্ট ছিলেন; কিন্তু অন্যেরা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা নতুন রাজ্য স্থাপনে ঈশ্বরকে সাহায্য করবে। এই ইহুদীদের বলা হল অত্যুত্সাহী ধর্মোন্মাদের দল। এরা রোমাণদের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করল এবং যেসব ইহুদীরা রোমাণদের সঙ্গে সহযোগিতা করছিল তাদের প্রায়ই নিধন করতে লাগল।
ইহুদী ধর্মীয় দল সকল
খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী নাগাদ ইহুদীদের কাছে মোশির বিধি-ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। লোকেরা ইতিমধ্যে এই বিধি-ব্যবস্থা খুঁটিয়ে পড়েছে এবং তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করেছে। এই লোকেরা বিভিন্নভাবে বিধি-ব্যবস্থাকে বুঝেছিল (নিজের নিজের মত করে)। কিন্তু বহু ইহুদীই এই বিধি-ব্যবস্থার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ছিল। ইহুদীদের মধ্যে প্রধান তিনটি ধর্মীয় দল ছিল এবং প্রত্যেক দলেই লেখকগণ (আইনজীবি অথবা পণ্ডিতেরা) ছিল।
সদ্দূকী
একটি দলের নাম ছিল সদ্দূকী। এই নাম সম্ভবতঃ রাজা দায়ূদের সময়ে মহাযাজক সদোক এর নাম থেকে উদ্ভুত। অনেক যাজক এবং কর্তৃপক্ষের অনেক মানুষ সদ্দূকী ছিল। এরা ধর্মীয় ব্যাপারে কেবল মোশির বিধি-ব্যবস্থা (পাঁচটি গ্রন্থ) মেনে চলার মনোভাব গ্রহণ করেছিল। বিধি-ব্যবস্থায় যাজক এবং বলিদান বিষয়ে অনেক কিছুই শিক্ষণীয় ছিল, কিন্তু এতে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্বন্ধে কোন শিক্ষা ছিল না। তাই সদ্দূকীরা মৃত্যু থেকে মানুষের পুনরুত্থিত হওয়াতে বিশ্বাসী ছিল না।
ফরীশী
আরেকটি দলের নাম ছিল ফরীশী। এই নাম এসেছে একটি হিব্রু শব্দ থেকে যার অর্থ হল ব্যাখ্যা করা বা পৃথক করা। এই দলের লোকেরা সাধারণ মানুষের কাছে মোশির বিধি-ব্যবস্থা শিক্ষা দিতে বা তার ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করত। এরা বিশ্বাস করত যে মোশির সময় থেকে একটা মৌখিক ঐতিহ্য তৈরী হয়েছিল এবং এও বিশ্বাস করত যে প্রত্যেক প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিধি-ব্যবস্থার উপযুক্ত ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। ফরীশীরা শুধু মোশির বিধি-ব্যবস্থাকেই একমাত্র কর্তৃত্ব বলে মেনে নিতে রাজী ছিল না; তারা একই সঙ্গে ভাববাদীদের শিক্ষা, পবিত্র রচনাবলী, এমনকি তাদের নিজেদের পরম্পরাগত ঐতিহ্যের ওপরও আস্থাশীল ছিল। এরা বিধি-ব্যবস্থা এবং তাদের ঐতিহ্য উভয়ই অনুসরণ করতে যত্নবান ছিল। আর সেই জন্যেই তারা কি খাচ্ছে এবং কি স্পর্শ করছে, হাত ধোয়া এবং স্নান সম্পর্কে সতর্ক থাকত। তারা এটাও বিশ্বাস করত যে মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে, কারণ বহু ভাববাদীই এই সম্বন্ধে বলেছিলেন।
ইসীন
তৃতীয় বড় দল ছিল ইসীন। জেরুশালেমে বহু যাজকই ঈশ্বর অভিপ্রেত পথে জীবনযাপন করছিল না। তাছাড়া রোমানরা অনেক মহাযাজককে নিযুক্ত করেছিল; তাদের কয়েকজনের ক্ষেত্রে মোশির বিধি-ব্যবস্থার নির্দেশিত যোগ্যতার অভাব ছিল। এইজন্য ইসীনরা মনে করত যে জেরুশালেমে উপাসনা এবং বলিদান ইত্যাদি ঠিকভাবে হচ্ছে না। আর তাই এরা বেরিয়ে এসে জুডিয়ান মরুভূমিতে বাস করতে শুরু করল। এরা নিজস্ব এক সম্প্রদায় তৈরী করল, যেখানে কেবল অন্য ইসীনরাই বসবাস করতে পারত। ইসীনরা উপোস করত, প্রার্থনা করত এবং অপেক্ষা করত কখন ঈশ্বর মন্দির শুচিশুদ্ধ এবং যাজকবৃত্তিকে পবিত্র করার জন্য খ্রীষ্টকে পাঠাবেন।
নূতন নিয়ম
ইতিমধ্যে ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। তিনি একটি বিশেষ জাতিকে মনোনীত করে তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন যে চুক্তি তাঁর ন্যায়বিচার ও দয়া বুঝতে এই মানুষদের প্রস্তুত করে তুলবে। জগতকে আশীর্বাদ ধন্য করবার জন্য একটি নতুন ও উন্নততর চুক্তির ওপরে নির্ভরশীল এক ত্রুটিহীন আধ্যাত্মিক রাজ্য গড়ে তোলবার যে পরিকল্পনা তাঁর ছিল, ভাববাদী এবং কবিদের মাধ্যমে ঈশ্বর তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা প্রতিশ্রুত খ্রীষ্টের আগমনের পূর্বেই হল। ভাববাদীরা তাঁর আগমনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বলে দিয়েছিলেন। তাঁরা বলে দিয়েছিলেন কোথায় খ্রীষ্টের জন্ম হবে, তিনি কেমন ধরণের মানুষ হবেন এবং তাঁকে কি কাজ করতে হবে। ক্রমে খ্রীষ্টের আবির্ভাবের এবং নতুন চুক্তি শুরু করার সময় এসে গেল।
নূতন নিয়মের লেখাগুলি পড়লে ঈশ্বরের নতুন চুক্তি কিভাবে যীশুর দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল এবং কার্যকরী হয়েছিল তার বর্ণনা পাওয়া যায়। এই যীশু ছিলেন খ্রীষ্ট (অর্থাৎ “অভিষিক্ত ব্যক্তি খ্রীষ্ট”) এই রচনাগুলি শিক্ষা দেয় যে এই নতুন চুক্তি সমস্ত মানুষের জন্যে। এতে আছে কেমন করে প্রথম শতাব্দীতে মানুষ ঈশ্বরের মহান ভালোবাসার দানে সাড়া দিয়েছিল এবং নতুন চুক্তির ভাগীদার হয়ে উঠেছিল। এই লেখাগুলিতে আছে ঈশ্বরর লোকদের প্রতি নির্দেশনামা: কেমন করে এই জগতে জীবনযাপন করতে হবে। ঈশ্বর তাঁর লোকদের এক পরিপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ ইহলৌকিক জীবন এবং মৃত্যুর পরে তাঁর সঙ্গে বেঁচে থাকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাও এই রচনাগুলিতে লেখা আছে।
নতুন চুক্তির রচনাগুলিতে অন্ততঃ আটজন বিভিন্ন লেখকের লেখা সাতাশটি ভিন্ন ভিন্ন “পুস্তক” আছে। এই লেখকেরা সবাই লিখেছিলেন গ্রীক ভাষায়, প্রথম শতাব্দীতে এই ভাষা পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত ছিল। সমগ্র রচনা সংগ্রহের অর্ধেকেরও বেশী অংশ লিখেছিলেন চারজন “প্রেরিত” যীশুর দ্বারা নির্বাচিত তাঁর বিশেষ প্রতিনিধি অথবা সহায়কারী। এঁদের মধ্যে-মথি, যোহন এবং পিতর ছিলেন যীশুর জীবদ্দশায় তাঁর নিকটতম বারোজন অনুগামীর মধ্যে তিন জন। পৌল নামক একজন “প্রেরিত” পরবর্তীকালে যীশুর এক অলৌকিক আবির্ভাবের মাধ্যমে মনোনীত হন।
প্রথম চারটি পুস্তক যেগুলিকে “সুসমাচার” বলা হয়, সেগুলি হল যীশু খ্রীষ্টের জীবন ও মৃত্যুর পৃথক পৃথক বিবরণ। সাধারণভাবে এই পুস্তকগুলি যীশুর শিক্ষা, পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য এবং তাঁর মৃত্যুর অসামান্য গুরুত্ব এই বিষয়গুলির উপর জোর দিয়েছে, এগুলি কেবল তাঁর জীবনের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বিবরণ মাত্র নয়। চতুর্থ পুস্তক যোহনের সুসমাচার সম্পর্কে এই কথা সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য। প্রথম তিনটি সুসমাচারে বিষয়বস্তুর দিক থেকে খুবই মিল রয়েছে। বস্তুত এদের একটিতে পাওয়া তথ্য অন্য একটি বা দুটিতেই অনেক পরিমানে পাওয়া যায়। অবশ্য প্রত্যেক রচনাকারই ভিন্ন ভিন্ন পাঠকগোষ্ঠীর জন্যে লিখেছেন এবং আপাতভাবে প্রত্যেকেরই অন্যদের থেকে একটু আলাদা লক্ষ্য আছে বলে মনে হয়।
চারটি সুসমাচারের পরেই আছে প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণ যা হল যীশুর মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাগুলির ইতিবৃত্ত। পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে ঈশ্বরের ভালবাসা দানের কথা যীশুর অনুগামীগণ কিভাবে ঘোষণা করেছিলেন তার বর্ণনা এতে আছে। এতে আরও আছে সেই বিবরণ কিভাবে এই “সুসমাচার” ঘোষণার ফলে সারা পলেষ্টীয় এবং রোমান রাজ্য জুড়ে খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস (ধর্ম) ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল। এই প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণী পুস্তক লিখেছিলেন লূক, তিনি যা লিপিবদ্ধ করেছিলেন তার অধিকাংশ বিষয়েরই প্রত্যক্ষ দ্রষ্ট ছিলেন তিনি তৃতীয় সুসমাচারেরও লেখক। তাঁর দুটি গ্রন্থের মধ্যে একটি যুক্তিসঙ্গত ঐক্যসুত্র আছে। যীশুর জীবনী সম্পর্কে তাঁর বিবরণীর একটি স্বাভাবিক পরিশিষ্ট হিসেবে এসেছে “প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণ।” প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণীর পরে আছে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ ও গোষ্ঠীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠির একটি সংগ্রহ। এই পত্রগুলি খ্রীষ্টীয়ান নেতা পৌল এবং পিতরের মত মানুষের কাছে থেকে পাঠানো, যারা দুজন ছিলেন যীশুর প্রেরিত। সেই সময়ে জনগণ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিল সেগুলির মোকাবিলা তারা কিভাবে করবে সেই ব্যাপারে তাদের সাহায্য করার জন্য এই পত্রগুলি রচিত। এগুলি শুধু ঐ অল্পসংখ্যক মানুষগুলিকেই নয় বরং সমস্ত খ্রীষ্টায়ানকে তাদের ধর্ম বিশ্বাস সম্মিলিত জীবন এবং এই জগতে জীবনযাপনের খুঁটিনাটি ব্যাপারে তথ্য দেয়, শুধরে দেয়, শিক্ষিত করে এবং অনুপ্রানিত করে।
নূতন নিয়মের শেষ পুস্তক “প্রকাশিত বাক্য” অন্য সব পুস্তক থেকে আলাদা। এর মধ্যে পাওয়া যায় এর রচয়িতা প্রেরিত যোহনের দর্শনগুলির বর্ণনা। এই পুস্তকের অনেক চরিত্র এবং চিত্রকল্প পুরাতন নিয়মের থেকে নেওয়া এবং এগুলি উত্তমরূপে তখনই বোঝা সম্ভব যখন এগুলিকে পুরাতন চুক্তির লেখাগুলির সঙ্গে তুলনা করে পড়া হবে। এই চূড়ান্ত পুস্তকে আছে খ্রীষ্টীয়ানদের উদ্দেশ্য এই নিশ্চয়তার আশ্বাস যে, ঈশ্বরের ক্ষমতা এবং তাদের নেতা ও সহায় যীশুর ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয় অবশ্যম্ভাবী।
বাইবেল ও আধুনিক পাঠক
আজকের বাইবেল পাঠককে এটা মনে রাখতে হবে যে এই পুস্তকগুলি হাজার হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল, এমন লোকদের জন্যে যারা আমাদের চেয়ে অনেক স্বতন্ত্র এক সংস্কৃতির মধ্যে বাস করত। সাধারণভাবে লেখাগুলি যেসব নীতির ওপর আলোকপাত করে সেগুলি বিশ্বজনীন, কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক বিবরণ দৃষ্টান্ত এবং উল্লেখ কেবল সেই সময়কার সংস্কৃতির ও ইতিহাসের জ্ঞানের ভিত্তিতেই বোধগম্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যীশু একটা গল্প বলছেন: একটি লোকের জমিতে বীজ বোনার গল্প যে জমিটার নানা ধরণের মৃত্তিকাগুণ বর্তমান। এই মৃত্তিকা চরিত্রের সঠিক বৈশিষ্ট্যগুলি আজকের পাঠকের কাছে অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু এই গল্পটি থেকে যীশু যে শিক্ষা দিলেন তা যে কোন সময়ে যে কোনও দেশের মানুষের কাছে গ্রহণীয়।
আধুনিক পাঠকের কাছে বাইবেলের জগত্‌টা একটু বিস্ময়কর মনে হতে পারে। তখনকার লোকেদের আচার অনুষ্ঠান, দৃষ্টিভঙ্গী, কথাবার্তার ধরণ এসবই পুরোপুরি অপরিচিত মনে হতে পারে। এইসব বিষয়ের মূল্যায়ন কিন্তু সেই সময়ের এবং স্থানের মানদণ্ডে বিচার করাই যুক্তিযুক্ত - আধুনিক মাপকাঠির সাহায্যে নয়। এটা খেয়াল রাখাও জরুরী যে বিজ্ঞানের বই হিসেবে বাইবেল লেখা হয় নি। এই পুস্তক লেখা হয়েছিল প্রধানতঃ ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা বিবৃত করার জন্যে এবং মানুষের কাছে সেইসব ঘটনার তাত্‌পর্য্য তুলে ধরবার জন্যে। এর শিক্ষা সব বিশ্বজননী সত্যের সঙ্গে জড়িত এবং সেগুলি বিজ্ঞানের রাজ্যের বাইরের জিনিস। বাইবেল আজকের যুগেও প্রাসঙ্গিক কারণ এর আলোচনা ও বিশ্লেষণের বিষয় হল মানুষের আত্মিক প্রয়োজনসমূহ যেগুলি কখনও পরিবর্তিত হয় না।
যিনি বাইবেল পুস্তকটি খোলা মনে পাঠ করবেন তিনি অনেক উপকার পাওয়ার আশা করতে পারেন। তিনি প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাস ও কৃষ্টি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করবেন। তিনি যীশু খ্রীষ্টের জীবন ও শিক্ষার বিষয়ে জানবেন এবং তাঁর অনুগামী হওয়ার অর্থ কি তাও জানবেন। তিনি লাভ করবেন কিছু মৌলিক আত্মিক অন্তর্দৃষ্টি এবং তিনি একটি গতিশীল এবং আনন্দময় জীবনযাপনের জন্যে যে ব্যবহারিক শিক্ষার দরকার তাও লাভ করবেন। জীবনের কঠিনতম প্রশ্নগুলির উত্তর তিনি এখানে পাবেন। কাজেই এই পুস্তক পড়বার অনেকগুলি উপযুক্ত কারণ আছে, আর যে ব্যক্তি খোলা এবং কৌতুহলী মন নিযে এটি পড়বেন তিনি খুব সম্ভব তার জীবনের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি তা আবিষ্কার করবেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version™
©Copyright 2001-2006 World Bible Translation Center
All rights reserved
Permissions
This copyrighted material may be quoted up to 1000 verses without written permission. However, the extent of quotation must not comprise a complete book nor should it amount to more than 50% of the work in which it is quoted. This copyright notice must appear on the title or copyright page:
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version™
Taken from the Bengali HOLY BIBLE: EASY-TO-READ VERSION™
© 2007 by World Bible Translation Center, Inc. and used by permission.
When quotations from the ERV are used in non-saleable media, such as church bulletins, orders of service, posters, transparencies or similar media, a complete copyright notice is not required, but the initials (ERV) must appear at the end of each quotation.
Requests for permission to use quotations or reprints in excess of 1000 verses or more than 50% of the work in which they are quoted, or other permission requests, must be directed to and approved in writing by World Bible Translation Center, Inc.
Address
World Bible Translation Center, Inc.
P.O. Box 820648
Fort Worth, Texas 76182
Email: [email protected]
Web: www.wbtc.com
Free Downloads
Download free electronic copies of
World Bible Translation Center’s Bibles and New Testaments at:
www.wbtc.org
Printed at Brilliant Printers Pvt. Ltd., Bangalore, India