১ হে ইস্রায়েল, শোনো, তুমি নিজের থেকে মহান ও শক্তিশালী জাতিদেরকে, আকাশ পর্যন্ত দেওয়ালে ঘেরা বিশাল শহরগুলিকে, অধিকারচ্যুত করতে আজ যর্দন পার হয়ে যাচ্ছ; ২ সেই জাতি বিশাল ও লম্বা, তারা অনাকীয়দের সন্তান; তুমি তাদেরকে জান, আর তাদের বিষয়ে তুমি তো এ কথা শুনেছ যে, “অনাক সন্তানদের সামনে কে দাঁড়াতে পারে?” ৩ কিন্তু আজ তুমি এটা জানো যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজে গ্রাসকারী আগুনের মতো তোমার আগে আগে যাচ্ছেন; তিনি তাদেরকে ধ্বংস করবেন, তাদেরকে তোমার সামনে নীচু করবেন; তাতে সদাপ্রভু তোমাকে যেমন বলেছেন, তেমনি তুমি তাদেরকে তাড়িয়ে দেবে ও তাড়াতাড়ি ধ্বংস করবে। ৪ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমার সামনে থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন, তখন মনে মনে এমন ভেবো না যে, “আমার ধার্মিকতার জন্য সদাপ্রভু আমাকে এই দেশ অধিকার করাতে এনেছেন।” কারণ জাতিদের দুষ্টতার জন্যই সদাপ্রভু তাদেরকে তোমার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবেন। ৫ তোমার ধার্মিকতা কিংবা হৃদয়ের সরলতার জন্য তুমি যে তাদের দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ, তা না; কিন্তু সেই জাতিদের দুষ্টতার জন্য এবং তোমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে শপথের মাধ্যমে দেওয়া আপনার বাক্য সফল করার জন্যে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সামনে তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন। ৬ অতএব জেনো যে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে তোমার ধার্মিকতার জন্য অধিকার করার জন্য তোমাকে এই উত্তম দেশ দেবেন, তা না; কারণ তুমি একগুঁয়ে জাতি। ৭ তুমি মরুভূমির মধ্যে নিজের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে যেমন অসন্তুষ্ট করেছিলে, তা মনে রেখো, ভুলে যেও না; মিশর দেশ থেকে বের হয়ে আসার দিন থেকে এই জায়গায় আসা পর্যন্ত তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হয়ে আসছ। ৮ তোমরা হোরেবেও সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করেছিলে এবং সদাপ্রভু যথেষ্ট রেগে গিয়ে তোমাদেরকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। ৯ যখন আমি সেই দুটি পাথরের ফলক নেবার জন্যে পর্বতে উঠেছিলাম, তখন চল্লিশ দিনরাত পর্বতে থেকেছিলাম, খাবার খাওয়া কি জল পান করিনি। ১০ আর সদাপ্রভু আমাকে ঈশ্বরের নিজের আঙ্গুল দিয়ে লেখা সেই দুটি পাথরের ফলক দিয়েছিলেন; পর্বতে সমাজের দিনে আগুনের মধ্যে থেকে সদাপ্রভু তোমাদেরকে যা যা বলেছিলেন, সেই সব কথা ঐ দুটি পাথরে লেখা ছিল। ১১ সেই চল্লিশ দিন রাতের শেষে সদাপ্রভু ওই দুটি পাথরের ফলক অর্থাৎ নিয়মের পাথরের ফলক আমাকে দিলেন। ১২ আর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “ওঠ, এ জায়গা থেকে তাড়াতাড়ি যাও; কারণ তোমার যে লোকদেরকে তুমি মিশর থেকে বের করে এনেছ, তারা নিজেদেরকে ভ্রষ্ট করেছে; আমি যে আদেশ তাদেরকে করেছিলাম তা থেকে তারা তাড়াতাড়ি বিপথে চলে গেছে, তারা নিজেদের জন্য ছাঁচে ঢালা প্রতিমা তৈরী করেছে।” ১৩ সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “আমি এই লোকদেরকে দেখেছি, আর দেখ, তারা খুবই একগুঁয়ে লোক; ১৪ তুমি আমার কাছ থেকে সরে যাও, আমি এদেরকে ধ্বংস করে আকাশমণ্ডলের নীচে থেকে এদের নাম মুছে ফেলি; আর আমি তোমাকে এদের থেকে শক্তিশালী ও মহান জাতি করব।” ১৫ তখন আমি ফিরে পর্বত থেকে নেমে আসলাম, পর্বত আগুনে জ্বলছিল। তখন আমার দুই হাতে নিয়মের দুটি পাথরের ফলক ছিল। ১৬ আমি দেখলাম, আর দেখ, তোমরা নিজেদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছিলে, নিজেদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক বাছুর তৈরী করেছিলে; সদাপ্রভুর আদেশ দেওয়া রাস্তা থেকে তাড়াতাড়ি বিপথে চলে গিয়েছিলে। ১৭ তাতে আমি সেই দুটি পাথরের ফলক ধরে নিজের দুই হাত থেকে ফেলে তোমাদের সামনে ভাঙলাম। ১৮ আর তোমরা সদাপ্রভুর চোখে যা খারাপ, তা করে যে পাপ করেছিলে, তাঁর অসন্তোষজনক তোমাদের সেই সব পাপের জন্য আমি আগের মতো চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সদাপ্রভুর সামনে উপুড় হয়ে থাকলাম, আমি খাবার খায়নি বা জলও পান করে নি। ১৯ কারণ সদাপ্রভু তোমাদেরকে ধ্বংস করতে রেগে যাওয়াতে আমি তাঁর রাগ ও অসন্তুষ্টতার জন্য ভয় পেয়েছিলাম; কিন্তু সেই বারেও সদাপ্রভু আমার নিবেদন শুনলেন। ২০ আর সদাপ্রভু হারোণকে ধ্বংস করার জন্যে তাঁর ওপরে খুব রেগে গিয়েছিলেন, আমি ঠিক সেই সময়ে হারোণের জন্যও প্রার্থনা করলাম। ২১ আর আমি তোমাদের পাপ, সেই যে বাছুর তোমরা তৈরী করেছিলে, তা নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিলাম ও যে পর্যন্ত তা ধূলোর মতো গুঁড়ো না হল, ততক্ষণ পিষে ভালোভাবে গুঁড়ো করলাম; পরে পর্বত থেকে বয়ে যাওয়া জলস্রোতে তাঁর ধূলো ফেলে দিলাম। ২২ আর তোমরা তবিয়েরাতে, মঃসাতে ও কিব্রোৎহত্তাবাতে সদাপ্রভুকে উত্তেজিত করলে। ২৩ তার পর সদাপ্রভু যে সময়ে কাদেশ বর্ণেয় থেকে তোমাদেরকে পাঠিয়ে বললেন, “তোমরা উঠে যাও, আমি তোমাদেরকে যে দেশ দিয়েছি, তা অধিকার কর;” সেই সময়ে তোমরা নিজের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধাচারী হলে, তাঁতে বিশ্বাস করলে না ও তাঁর রবে কান দিলে না। ২৪ তোমাদের সঙ্গে আমার পরিচয়ের দিন থেকে তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হয়ে আসছ। ২৫ যা হোক, আমি উপুড় হয়ে থাকলাম; ঐ চল্লিশ দিন রাত আমি সদাপ্রভুর সামনে উপুড় হয়ে থাকলাম; কারণ সদাপ্রভু তোমাদেরকে ধ্বংস করার কথা বলেছিলেন। ২৬ আর আমি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলাম, “প্রভু সদাপ্রভু, তুমি নিজের অধিকারস্বরূপ যে লোকদেরকে নিজের মহিমায় মুক্ত করেছ ও শক্তিশালী হাতের মাধ্যমে মিশর থেকে বের করে এনেছ, তাদেরকে ধ্বংস কর না। ২৭ তোমার দাসদেরকে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে মনে কর; এই লোকদের একগুঁয়েমিতার, দুষ্টতার ও পাপের প্রতি দেখ না; ২৮ সুতরাং তুমি আমাদেরকে যে দেশ থেকে বের করে এনেছ, সেই দেশীয় লোকেরা এই কথা বলে, সদাপ্রভু ওদেরকে যে দেশ দিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সে দেশে নিয়ে যেতে পারেননি এবং তাদেরকে ঘৃণা করেছেন বলেই তিনি মরুভূমিতে হত্যা করার জন্যে তাদেরকে বের করে এনেছেন। ২৯ তবুও তারাই তোমার লোক ও তোমার অধিকার; এদেরকে তুমি নিজের মহাশক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বের করে এনেছ।”