অশুচিতা-বিষয়ক উপদেশ।
১ আর যিরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা এসে তাঁর কাছে জড়ো হল।
২ তারা দেখল যে, তাঁর কয়েক জন শিষ্য অশুচি হাত দিয়ে খাচ্ছে।
৩ ফরীশীরা ও ইহূদিরা সবাই পূর্বপুরুষদের দেওয়া যে নিয়ম মেনে চলে আসছে সেই নিয়ম মেনে হাত না ধুয়ে খায় না।
৪ আর বাজার থেকে আসলে তারা স্নান না করে খাবার খায় না; এবং তারা আরও অনেক বিষয় মানবার আদেশ পেয়েছে, যথা, ঘটী, ঘড়া ও পিতলের নানা পাত্র ধোয়া।
৫ পরে ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার শিষ্যেরা পূর্বপুরুষদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে সে নিয়ম মেনে চলে না কেন তারা তো অশুচি হাত দিয়েই খায়?
৬ তিনি তাদেরকে বললেন, আপনারা ভণ্ড, যিশাইয় ভাববাদী তোমাদের বিষয়ে একদম ঠিক কথা বলেছেন, তিনি লিখেছেন, “এই লোকেরা শুধুই মুখে আমার সম্মান করে, কিন্তু এদের হৃদয় আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
৭ এরা বৃথাই আমার আরাধনা করে এবং মানুষের বানানো নিয়মকে প্রকৃত নিয়ম বলে শিক্ষা দেয়।”
৮ তোমরা ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে মানুষের দেওয়া কতগুলি নিয়ম পালন করো।
৯ তিনি তাদেরকে আরও বললেন, ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভালো উপায় আপনাদের জানা আছে।
১০ কারণ মোশি বললেন, “তুমি নিজের বাবাকে ও নিজ মাকে সম্মান করবে,” আর “যে কেউ বাবার কি মায়ের নিন্দা করে, তার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যই হবে।”
১১ কিন্তু তোমরা বলে থাক, মানুষ যদি বাবাকে কি মাকে বলে, ‘আমি যা দিয়ে তোমার উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উত্সর্গ করা হয়েছে,’
১২ তবে বাবা ও মার জন্য তাকে আর কিছুই করতে হয় না।
১৩ এইভাবে তোমরা নিজেদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের আদেশকে অগ্রাহ্য করছ। আর এই রকম আরও অনেক কাজ করে থাক।
১৪ পরে তিনি লোকদেরকে আবার কাছে ডেকে বললেন, তোমরা সকলে আমার কথা শোন ও বোঝ।
১৫ বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে যায় তা মানুষকে অপবিত্র করতে পারে না;
১৬ কিন্তু যা মানুষের ভিতর থেকে বের হয়, সেই সব মানুষকে অশুচি করে।
১৭ পরে তিনি যখন লোকদের কাছ থেকে ঘরের মধ্যে গেলেন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে গল্পটির মানে জিজ্ঞাসা করলেন।
১৮ তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরাও কি এত অবুঝ? তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু বাইরের থেকে মানুষের ভিতরে যায়, তা তাকে অশুচি করতে পারে না?
১৯ কারণ এটা তার হৃদয়ের মধ্যে যায় না, কিন্তু পেটের মধ্যে যায় এবং যেটা বাইরে গিয়ে পড়ে। একথা দিয়ে তিনি বোঝালেন সমস্ত খাদ্য দ্রব্যই শুচি।
২০ তিনি আরও বললেন, মানুষ থেকে যা বের হয়, সেগুলোই মানুষকে অপবিত্র করে।
২১ কারণ অন্তর থেকে, মানে মানুষের হৃদয় থেকে, কুচিন্তা বের হয়, ব্যভিচার, চুরি, নরহত্যা,
২২ ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লাম্পট্য, কুদৃষ্টি, ঈশ্বরনিন্দা, অভিমান ও মূর্খতা;
২৩ এই সব মন্দ বিষয় মানুষের ভেতর থেকে বের হয় এবং মানুষকে অপবিত্র করে।
প্রভু যীশুর আরও কয়েকটি অলৌকিক কাজ। যীশু একটি ভূতগ্রস্থ মেয়েকে সুস্থ করেন। সেই বিষয়ে শিক্ষা।
২৪ পরে তিনি উঠে সে জায়গা থেকে সোর ও সিদোন অঞ্চলে চলে গেলেন। আর তিনি এক বাড়িতে ঢুকলেন তিনি চাইলেন যেন কেউ জানতে না পারে; কিন্তু তিনি লুকিয়ে থাকতে পারলেন না।
২৫ কারণ তখন একটি মহিলা, যার একটি মেয়ে ছিল, আর তাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল, যীশুর কথা শুনতে পেয়ে মহিলাটি এসে তাঁর পায়ের ওপর পড়ল।
২৬ মহিলাটি গ্রীক, জাতিতে সুর ফৈনীকী। সে তাঁকে কাকুতি মিনতি করতে লাগল, যেন তিনি তার মেয়ের ভিতর থেকে ভূত তাড়িয়ে দেন।
২৭ তিনি তাকে বললেন, প্রথমে সন্তানেরা পেট ভরে খাক, কারণ সন্তানদের খাবার নিয়ে কুকুরদের কাছে ফেলে দেওয়া উচিত নয়।
২৮ কিন্তু মহিলাটি উত্তর করে তাঁকে বলল, হ্যাঁ প্রভু, আর কুকুরেরাও টেবিলের নীচে পড়ে থাকা সন্তানদের খাবারের গুঁড়াগাঁড়া খায়।
২৯ তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি ঠিক কথাই বলেছ, তুমি এখন চলে যাও, তোমার মেয়ের মধ্য থেকে ভূত বের হয়ে গেছে।
৩০ পরে সে ঘরে গিয়ে দেখতে পেল, মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে এবং ভূত বের হয়ে গেছে।
মূখ ও বধিরকে সুস্থ করলেন।
৩১ পরে তিনি সোর শহর থেকে বের হলেন এবং সিদোন হয়ে দিকাপলি অঞ্চলের ভিতর দিয়ে গালীল সাগরের কাছে আসলেন।
৩২ তখন মানুষেরা একজন বধির ও তোতলা লোককে তাঁর কাছে এনে তার ওপরে হাত রাখতে কাকুতি মিনতি করল।
৩৩ তিনি তাকে ভিড়ের মধ্য থেকে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার দুই কানে নিজের অাঙ্গুল দিলেন, থুথু দিলেন ও তার জিভ ছুঁলেন।
৩৪ আর তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তাকে বললেন, ইপৃফাথা, অর্থাৎ খুলে যাক।
৩৫ তাতে তার কর্ণ খুলে গেল, জিভের বাধন খুলে গেল, আর সে ভালোভাবে কথা বলতে লাগল।
৩৬ পরে তিনি তাদেরকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা এই কথা কাউকে বোলো না; কিন্তু তিনি যত বারণ করলেন, তত তারা আরও বেশি প্রচার করল।
৩৭ আর তারা সবাই খুব অবাক হল, বলল, ইনি সব কাজ নিখুঁত ভাবে করেছেন, ইনি কালাকে শুনবার শক্তি এবং বোবাদের কথা বলবার শক্তি দান করেছেন।