যীশুর দেশীয়রা তাঁকে অস্বীকার করে।
১ পরে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন এবং নিজের দেশে আসলেন, আর তাঁর শিষ্যরা তাঁর পেছন পেছন গেল।
২ বিশ্রামবার এলে তিনি সমাজঘরে শিক্ষা দিতে লাগলেন; তাতে অনেক লোক তার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, এই লোক এ সব শিক্ষা কোথা থেকে পেয়েছে? একি জ্ঞান তাকে ঈশ্বর দিয়েছে? এই লোকটী হাত দিয়ে যে সব অলৌকিক কাজ হচ্ছে, এটাই বা কি?
৩ একি সেই ছুতার মিস্ত্রি, মরিয়মের সেই পুত্র এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? এবং তার বোনেরা কি আমাদের এখানে নেই? এইভাবে তারা যীশুকে নিয়ে বাধা পেতে লাগল।
৪ তখন যীশু তাদের বললেন, নিজের শহর ও নিজের লোক এবং নিজের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও ভাববাদী অসম্মানিত হন না।
৫ তখন তিনি সে জায়গায় আর কোন আশ্চর্য্য কাজ করতে পারলেন না, শুধুমাত্র কয়েক জন রোগগ্রস্থ মানুষের ওপরে হাত রেখে তাদেরকে সুস্থ করলেন।
৬ আর তিনি তাদের অবিশ্বাস দেখে অবাক হলেন। পরে তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা দিতে লাগলেন।
বারোজন শিষ্যকে প্রচারে পাঠালেন।
৭ আর তিনি সেই বারো জনকে কাছে ডেকে দুজন দুজন করে তাঁদেরকে প্রচার করবার জন্য পাঠিয়ে দিলেন; এবং তাঁদেরকে মন্দ আত্মার ওপরে ক্ষমতা দান করলেন;
৮ আর নির্দেশ করলেন, তারা যেন চলার জন্য এক এক লাঠি ছাড়া আর কিছু না নেয়, রুটি ও না, থলি কি দুটি জামাকাপড় নিও না, কোমরবন্ধনীতে পয়সাও না;
৯ কিন্তু পায়ে জুতো পরো, আর দুইটি জামাও পরিও না।
১০ তিনি তাঁদেরকে আরও বললেন, তোমরা যখন কোন বাড়িতে ঢুকবে, সেখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়া পর্যন্ত সেই বাড়িতে থেকো।
১১ আর যদি কোন জায়গার লোক তোমাদেরকে গ্রহণ না করে এবং তোমাদের কথা না শোনে, সেখান থেকে যাওয়ার সময় তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যের জন্য নিজ নিজ পায়ের থেকে ধূলো ঝেড়ে ফেলো।
১২ পরে তাঁরা গিয়ে প্রচার করলেন, যেন মানুষেরা পাপ থেকে মন ফেরায়।
১৩ আর তাঁরা অনেক ভূত ছাড়ালেন এবং অনেক অসুস্থ লোককে তেল মাখিয়ে তাদেরকে সুস্থ করলেন।
যোহন বাপ্তাইজকের হত্যা।
১৪ আর হেরোদ রাজা তাঁর কথা শুনতে পেলেন, কারণ যীশুর নাম খুব সুনাম ছিল। তখন তিনি বললেন, বাপ্তিষ্মদাতা যোহন মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছেন, আর সেই জন্য এইসব অলৌকিক কাজ করতে পারছেন।
১৫ কিন্তু কেউ কেউ বলল, উনি এলিয় এবং কেউ কেউ বলল, উনি একজন ভবিষ্যত বক্তা, ভবিষ্যৎ বক্তাদের মধ্যে কোন এক জনের মত।
১৬ কিন্তু হেরোদ তাঁর কথা শুনে বললেন, আমি যে যোহনের মাথা শিরচ্ছেদ করেছি, তিনি উঠেছেন।
১৭ হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন এবং তার জন্য যোহনকে ধরে বেঁধে কারাগারে রেখেছিলেন
১৮ কারণ যোহন হেরোদকে বলেছিলেন, ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা আপনার উচিত হয়নি।
১৯ আর হেরোদিয়া তাঁর ওপর রেগে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পেরে ওঠেনি।
২০ কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্মিক ও পবিত্র লোক বলে ভয় করতেন ও তাঁকে রক্ষা করতেন। আর তাঁর কথা শুনে তিনি খুব অস্বস্তি বোধ করতেন এবং তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন।
২১ পরে হেরোদিয়ার কাছে এক সুযোগ এল, যখন হেরোদ নিজের জন্মদিনে বড় বড় লোকদের, সেনাপতিদের এবং গালীলের প্রধান লোকদের জন্য এক রাত্রিভোজ আয়োজন করলেন;
২২ আর হেরোদিয়ার মেয়ে সেই ভোজ সভায় নেচে হেরোদ এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভোজে বসেছিলেন, তাঁদের সন্তুষ্ট করল। তাতে রাজা সেই মেয়েকে বললেন, তোমার যা ইচ্ছা হয়, আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দেব।
২৩ আর তিনি শপথ করে তাকে বললেন, অর্ধেক রাজ্য পর্যন্ত হোক, আমার কাছে যা চাইবে, তাই তোমাকে দেব।
২৪ সে তখন বাইরে গিয়ে নিজের মাকে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি চাইব? সে বলল, যোহন বাপ্তিষ্মদাতার মাথা।
২৫ সে তখনই তাড়াতাড়ি করে হলের মধ্যে গিয়ে রাজার কাছে তা চাইল, বলল, আমার ইচ্ছা এই যে, আপনি এখনই যোহন বাপ্তিষ্মদাতার মাথা থালায় করে আমাকে দিন।
২৬ তখন রাজা খুব দুঃখিত হলেন, কিন্তু নিজের শপথের কারণে এবং যারা তাঁর সঙ্গে ভোজে বসেছিল, তাদের জন্যে, তাকে ফিরিয়ে দিলেন না।
২৭ আর রাজা তখনই একজন সেনাকে পাঠিয়ে যোহনের মাথা আনতে আদেশ দিলেন; সেই সেনাটি কারাগারের মধ্যে গিয়ে তাঁর মাথা কাটল,
২৮ পরে তাঁর মাথা থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দিল এবং মেয়েটি নিজের মাকে দিল।
২৯ এই খবর পেয়ে তাঁর শিষ্যরা এসে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে কবর দিল।
প্রভু যীশুর আরও কতকগুলি অলৌকিক কার্য্য। যীশু পাঁচ হাজার লোককে আশ্চর্য্যভাবে খাবার দেন।
৩০ পরে প্রেরিতরা যীশুর কাছে এসে জড়ো হলেন; আর তাঁরা যা কিছু করেছিলেন, ও যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেই সব তাঁকে বললেন।
৩১ তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরা দূরে এক নির্জন জায়গায় এসে কিছুদিন বিশ্রাম কর। কারণ অনেক লোক আসা যাওয়া করছিল, তাই তাঁদের খাবারও সময় ছিল না।
৩২ পরে তাঁরা নিজেরা নৌকা করে দূরে এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন।
৩৩ কিন্তু লোকে তাঁদেরকে যেতে দেখল এবং অনেকে তাঁদেরকে চিনতে পারল, তাই সব শহর থেকে মানুষেরা দৌড়ে গিয়ে তাঁদের আগে সেখানে গেল।
৩৪ তখন যীশু নৌকা থেকে বের হয়ে বহুলোক দেখে তাদের জন্য করুণাবিষ্ট হলেন, কারণ তারা পালকহীন মেষপালের মত ছিল; আর তিনি তাদেরকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন।
৩৫ পরে দিন প্রায় শেষ হলে তাঁর শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, এ জায়গা নির্জন এবং দিনও প্রায় শেষ;
৩৬ তাই এদেরকে যেতে দিন, যেন ওরা চারদিকে শহরে এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার জিনিস কিনতে পারে।
৩৭ কিন্তু তিনি উত্তর করে তাঁদেরকে বললেন, তোমরাই ওদেরকে কিছু খেতে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা গিয়ে কি দুশো সিকির রুটি কিনে নিয়ে ওদেরকে খেতে দেব?
৩৮ তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের কাছে কয়টি রুটি আছে? গিয়ে দেখ। তাঁরা দেখে বললেন, পাঁচটি রুটি এবং দুটী মাছ আছে।
৩৯ তখন তিনি সবাইকে সবুজ ঘাসের ওপরে দলে দলে বসিয়ে দিতে আদেশ দিলেন।
৪০ তারা কোনো সারিতে একশো জন ও কোনো সারিতে পঞ্চাশ জন করে বসে গেল।
৪১ পরে তিনি সেই পাঁচটি রুটি ও দুটী মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিলেন এবং সেই রুটি কয়টি ভেঙে লোকদের দেবার জন্য শিষ্যদের হাতে দিলেন; আর সেই দুটী মাছও সবাইকে ভাগ করে দিলেন।
৪২ তাতে সবাই খেল এবং সন্তুষ্ট হল,
৪৩ এবং শিষ্যরা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া জড়ো করে পূর্ণ বারো ঝুড়ি রুটি এবং মাছ তুলে নিলেন।
৪৪ যারা সেই রুটি খেয়েছিল সেখানে পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল।
যীশু জলের উপর হাঁটলেন।
৪৫ পরে যীশু তখনই শিষ্যদের শক্তভাবে বলে দিলেন, যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অপর পাড়ে বৈৎসৈদার দিকে যান, আর সেই সময় তিনি লোকদেরকে বিদায় করে দেন।
৪৬ যখন সবাই চলে গেল তখন তিনি প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে চলে গেলেন।
৪৭ যখন সন্ধ্যা হল, তখন নৌকাটি সমুদ্রের মাঝখানে ছিল এবং তিনি একা ডাঙায় ছিলেন।
৪৮ পরে যীশু দেখতে পেলেন শিষ্যরা নৌকায় করে যেতে খুব কষ্ট করছিল কারণ হাওয়া তাদের বিপরীত দিক থেকে বইছিল। আর প্রায় শেষ রাত্রিতে যীশু সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে আসলেন এবং তাঁদেরকে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
৪৯ কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখে তাঁরা ভূত মনে করে চেঁচিয়ে উঠলেন,
৫০ কারণ সবাই তাঁকে দেখেছিলেন ও ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, তাঁদেরকে বললেন, সাহস কর, এখানে আমি, ভয় করো না।
৫১ পরে তিনি তাঁদের সঙ্গে নৌকায় উঠলেন, আর বাতাস থেমে গেল; তাতে তাঁরা মনে মনে এই সব দেখে অবাক হয়ে গেল।
৫২ কারণ তাঁরা রুটি র বিষয় বুঝতে পারেননি, কিন্তু তাঁদের মন খুবই কঠিন ছিল এই সব বোঝার জন্য।
৫৩ পরে তাঁরা পার হয়ে গিনেষরৎ প্রদেশে এসে ভূমিতে নৌকা লাগালেন এবং সেখানে নোঙ্গর ফেললেন।
৫৪ যখন সবাই নৌকা থেকে বের হলো লোকেরা তখনি যীশুকে চিনতে পেরেছিল।
৫৫ তাঁকে চেনার পর সমস্ত অঞ্চলের চারদিক থেকে দৌড়ে আসতে লাগল এবং অসুস্থ লোকদের খাটে করে তিনি যে জায়গায় আছেন শুনতে পেয়ে মানুষেরা সেই জায়গায় আনতে লাগল।
৫৬ আর গ্রামে, কি শহরে, কি দেশে, যে কোনো জায়গায় তিনি গেলেন, সেই জায়গায় তারা অসুস্থদেরকে বাজারে বসাল; এবং তাঁকে মিনতি করল, যেন ওরা তাঁর পোশাকের ঝালর একটু ছুঁতে পারে, আর যত লোক তাঁকে ছুঁলো, সবাই সুস্থ হল।